Sunday, June 5, 2011

পুজিবাদ....জিন্দাবাদ....................


একজন মানুষ জীবনে যা অর্জন করে আর ভোগ করে এই দুইয়ের ব্যবধান তার জীবনে প্রকৃত সঞ্চয়এই সঞ্চয়ই প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করছেবিশ্বকে মোটা দাগে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভাগ করলে বলা যায় আমেরিকা, এশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া এই তিনের প্রভাব সবচেয়ে বেশীআমেরিকার অর্থনীতি অহেতুক সমৃদ্ধ বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারনেবর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যাংক নির্ভর একথা বলা নিষপ্রয়োজন, আর কোন দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা প্রত্যক্ষ ভাবে ব্যক্তি জীবনে অপরিসীমবর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যাবস্থাপনার ত্রুটিবিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাংকে প্রচুর অর্থ জমা রাখার ফলে আমেরিকার সব ব্যাংকেই বিশেষ করে বড় বড় ব্যাংক গুলিতে ঋণ দেবার মত অঢেল অর্থ থাকেব্যাংক গুলি বিভিন্ন নামে ও কৌশলে জনগনের মধ্য সহজ শর্তে ও অতি সহজে বিপূল পরিমান ঋণ বিতরন করে, ফলে জনগনের হাতে প্রচুর অর্থ আসেউদাহরন সরুপ কারও যদি বাড়ী কেনার জন্য দুই লাখ ডলার প্রয়োজন হয় সে ঋণ পেতে পারে হয়তো সাড়ে তিন বা চার লাখ ডলারএর ফলে জনগনের গড় ভোগ বেড়ে যায় সকল ক্ষেত্রেইআর হাতে অর্থের সমাগম থাকায় কর্মের ও সৃষ্টি হয় ব্যাপকএভাবেই আমেরিকার জনগন অন্যের অর্থে (বিশ্বেও বিভিন্ন দেশের জনগনের) ভোগ বিলাস করে আসছিল, মুলত মুদ্রা ব্যাবস্থার কারণেই নিরবে এই ঘটনা ঘটে আসছিলব্যাংক গুলির হাতে প্রচুর অর্থ থাকায় তারা প্রাইম ও সাব প্রাইম মার্কেটের মাধ্যমে ঋণ বিতরনের মচ্ছব চালায়¯^vfvweK ভাবেই জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রচুর আমদানীও করতে হয়আবার এই আমদানী যেসব দেশ থেকে করা হয় ঐসব দেশের অর্থই আমেরিকার ব্যাংকগুলির মাধ্যমে জনগনের হাত হয়ে আমদা্‌নীতে ব্যবহৃত হয়মানে যাদের অর্থ তাদের কাছ থেকেই কেনা আবার তাদের অর্থেই, অর্থা অর্থেও মালিক ও উপাদক একজন আর ভোক্তা আরেকজন(!)বিশাল এক মিথ্যের ওপর ফুলে থাকা আমেরিকার অর্থনীতি তাতো চুপসে যাবেইইউরোপ তার ইউরোর কারনে আমেরিকার এ ধা্‌ক্কা থেকে অনেকটা বেচেছে তবে তাদের ব্যাংক গুলোতেও প্রচুর অর্থ জমা থাকায় তারাও একই কায়দায় ঋণ বিতরন করেছেখুব সহজে ঋণ পাওয়া যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে কারোরই ঋণ খেলাপি হওয়ার কথা নয় কারণ প্রত্যেকেরই ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পায়, পুরাতন ঋণ পরিশোধ করে অধিক পরিমানে নতুন নতুন ঋণ গ্রহন, কই এর তেলে কই ভাজা আর কি! ব্যাংক গুলোও বছর শেষে বিপুল মুনাফা করে, ব্যাংক কর্মীরা উচ্চ হারে বেতন পেতে থাকে, চারি দিকে বাহ্‌ বাহ্‌আমেরিকার দেশজ উপাদন ছাড়াও সরকারের হাতে প্রচুর কালো টাকা আছে, অস্ত্র বিক্রি, চাঁদাবাজি, রাষ্ট্রীয় চুরি ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিতএই অর্থকে আভ্যন্তরিন অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হলে তা ভূর্তুকি আকারে করতে হবেআর বর্তমান অবস্থায় ব্যাংক গুলোকে বাচানোর নামে এই কাজটি করা খুবই সহজএজন্য ব্যাংকগুলো যে কারনে বির্যয়ে পড়ল তা দুর করে ব্যাংকের ঋণ আদায়ের মাধ্যমে আর্থিক ব্যাবস্থা পূনঃস্থাপনের দিকে তাদের নজর নেইবিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের ব্যাংকিং ব্যাবস্থায় কঠোর নিয়মারোপ ও শ্রেনীকরনের মাধ্যমে ঋণ প্রবাহ বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে শ্লথ রাখে ফলে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলিতেও পর্যাপ্ত অলস অর্থ মজুদ থাকে ঋণ নেবার উপযুক্ত লোক না পাওয়ার ফলেআর অতিরিক্ত অর্থ তখন ডলার রিজার্ভ ও অন্যান্য প্রকারে চলে যায় আমেরিকান ব্যাংকিং চ্যানেলে

বর্তমান এই নিয়মবদ্ধ আর্থিক অনাচারের ফলে পৃথিবীর উপাদন ভোগ করে যারা ন্যায্যত তারা তার প্রাপক নয়, কেবল মাত্র বৈশ্বিক লেন দেন ব্যাবস্থায় ডলার ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবেই আমেরিকায় অর্থনৈতিক ফানুস গড়ে উঠেছেএই সমস্যার ন্যায় সঙগত সমাধান আমেরিকার ব্যাংকে জমাকৃত বিভিন্ন দেশের সব অর্থের দায়িত্ব সরকারের কাধে নেয়া এবং বাজেটে এই অর্থের সংস্থান করাঅথবা আমেরিকা থেকে তাদের জমাকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা, যদিও তা এই মহুর্তে সম্ভব নয়তাই ইউরোর মত আরো বিভিন্ন আঞ্চলিক মুদ্রার প্রচলন করা দরকার তাতে অন্তত কিছুটা ন্যায্যতা নিশ্চিত হবেযদিও তাতে আমেরিকার অর্থনীতিতে এক কেয়ামত হয়ে যাবে আর তা হওয়াও উচিবর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি আমেরিকার ব্যাংকগুলিতে অন্যান্য দেশের ন্যায় একই নিয়মে শ্রেনীকরন করা হয় তাহলে সম্ভবত সর্বোচ্চ শ্রেনীকৃত ঋণের দেশে হবে আমেরিকাআমেরিকান ব্যাংক গুলির উচি জনগনের ঋণ মাফ বা অবলেপন করে দেয়া এবং এখাতে ব্যাংকগুলিকে পরিকল্পিতভাবে ভূর্তুকি দেয়া যাতে ব্যাংগুলো জনগনের আমানতের সুরক্ষা করে আর্থিক শৃংখলায় ফিরে আসতে পারে 

অনেকেই বলছেন আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল নিয়ন্ত্রনের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে, আসলে এই শিথিল নিয়ন্ত্রন আমেরিকার অজ্ঞাতে নয় বরং জ্ঞাতসারে এবং পরিকল্পিত ভাবেঅবশ্য এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য খুব বেশী প্রচেষ্টার দরকার হয়নি, বৈশ্যিক মুদ্রা ব্যবস্থার ফলে বরং তাদের ঘড়ের দুয়ারে এসে সূযোগ ধরা দিয়েছেসেই সূযোগে তারা হয়ে গেছে আমানতের খেয়ানতকারীআমেরিকা তার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের অর্থের নিরাপত্তার বদলে নিজ দেশের জনগনের ভোগ বিলাসের ব্যাস্থা করেছে, তাই রাষ্ট্র হিসাবে আমেরিকা তার জনগনের কাছে বাহবার দাবীদার তো বটেই

আমেরিকা তাদের ¯^m„ó এই সমস্যা অত্যন্ত কৌশলী প্রপাগান্ডার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসাবে বিশ্ববাসীর ঘাড়ে চালান করে দেয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকর্মসূচীর মাধ্যমেএই কর্মসূচিতে যে মহাবিশাল অর্থ সরবরাহ করে তার উস কি? এটা কি আমেরিকার জনগনের করের পয়সা নাকি তাদের আভ্যন্তরিন উপাদন হতে অর্জিত? বিভিন্ন অজুহাতে ও সূযোগে অন্যান্য দেশ থেকে চুরি করা অর্থ? নাকি কেবল কাগজ হতেই উপাদিত (ছাপানো)?
বিশ্ব ব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের গভীরতা বোঝাতে তাবড় অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদেরা আজ হতবাককেউ বলেছেন "অতল খাদের কিনারে", কেউবা বলছেন "অর্থনৈতিক সুনামি", কারোর মতে "অর্থনৈতিক পার্ল হারবার" কারোর বা "অথর্নীতির ৯/১১" তবে "টাইটানিক"-র সঙ্গে তুলনাটাই কেবল বাদ গেছেআসলে ঠিক কী ঘটছে? এক নগ্ন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু উদ্বেগজনক প্রশ্ন উঠে আসছে: আমরা কি ১৯২৯-র মতই এক নতুন বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি? কিভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হল আর কিভাবেই বা আমরা এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে পারি? আচ্ছা,কিরকম পৃথিবীতেই বা আমরা বাস করছি?

ওরা গতকালও ছিল মিথ্যেবাদী আর আজও মিথ্যেকথাই বলে চলেছে

শাসকদলের স্বার্থরক্ষাকারী সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং পুঁজিবাদী বিশ্বের দন্ডমুন্ডের কর্তারা এই ধ্বংসোন্মুখ অবস্থাটাকে আর কোনভাবেই গোপন রাখতে পারছে না আর পারবেই বা কিভাবে? পৃথিবীর বৃহ ব্যাঙ্কগুলোর কয়েকটা ইতোমধ্যেই দেউলে হয়ে গেছে: ধন্যবাদ রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে: সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক থেকে শতশত বিলিয়ন ডলার, পাউন্ড, ইউরোর ইন্‌জেকসন দিয়ে কোনরকমে তাদের প্রাণভ্রমরা টিকিয়ে রাখা হয়েছেআমেরিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ার বাজার অতলান্ত সংকটে নিমগ্ন: ২০০৮-র জানুয়ারি থেকে আজ অব্দি ২৫ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে যা আমেরিকার দুবছরের সামগ্রিক উপাদনের সমান এথেকেই বোঝা যায় গোটা বিশ্বের শাসকশ্রেণির আসল আতঙ্কের উসটা কোথায়স্টক মার্কেটের বিপর্যয়ের কারণ শুধুমাত্র ব্যাঙ্কগুলোর বিপর্যস্ত অবস্থা নয়; আমরা দেখব অথনৈতিক ক্ষেত্রে বিপুল অধোগতি, ব্যবসায়িক কর্মোদ্যোগগুলোর ক্রমবর্ধমান দেউলিয়াপনা, সর্বোপরি গত চল্লিশ বছরে দেখা যায়নি এমন অর্থনৈতিক মন্দা, যার  ফলে পুঁজিপতিরা বুঝতে পারছে যে তাদের লাভের অঙ্ক এত কমে যাবে যে তাদের   মাথা ঘুরে যাবেবস্তুতঃ লাভের এই পতনের অঙ্কটাও স্টক-মার্কেটের পতনের  অন্যতম একটা কারণ 
বুশ, মারকেল, ব্রাউন, সারকোজি ও হু জিন তাওদের মত পৃথিবীর দন্ডমুন্ডের কর্তারা একের পর এক শীর্ষ সম্মেলন ক'রে চলেছেন (যেমন কিনা জি-ফোর, জি-এইট, জি-সিক্সটিন, জি-ফর্টি সম্মেলন)-উদ্দেশ্য একটাই:   এই ভয়াবহ ক্ষতিটাকে সীমিত ক'রে রাখা এবং আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করা  নভেম্বরের মাঝামাঝি আবার একটা শীর্ষ-সম্মেলন হচ্ছে যেটাকে কেউ কেউ "পুঁজিবাদের পুর্নস্থাপনা" করার উপায় ব'লে ভাবছেনআর  রাজনীতিকদের বিচলিত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাবে আজকের টিভি, রেডিও আর খবরকাগজগুলোর  বিশেষজ্ঞদের দিশাহীন অবস্থার; একটাই বিষয়: সংকট'

কেন এই ভ্রমজাল পাতা?

এরা অর্থনৈতিক মহা বিপর্যয়টাকে লুকোতে যখন পারছে না তখন যে করেই হোক চেষ্টা করছে সত্যটাকে আড়াল করার; সোজা কথায়, যে করেই হোক বোঝাও পুঁজিবাদের অস্তিত্ব নাকচ হয়নি, হবেও না---আসল কথা হ'ল সাময়িক কিছু "অপব্যবহার" আর "বাড়াবাড়ির" বিরুদ্ধে লড়াই করা দেখানো হচ্ছে দোষটা আসলে ফাটকাবাজদের, অতিলোভী মুনাফাবাজদের, দোষ সরকারী কর-নীতি"র, দোষ নিও-লিব্যারালিজম"-র!
এই রূপকথার গল্পটা গেলানোর জন্য পেশাদার ধাপ্পাবাজদের মাঠে নামানো হয়েছেসেই একই বিশেষজ্ঞ যারা দুদিন আগে বলেছিল অর্থনীতি বেশ স্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে, ব্যাঙ্কগুলো ফার্স্টক্লাস রান করছে, তারাই আজ টিভি মিডিয়াতে হামলে পড়ছে নতুন মিথ্যে শোনানোর জন্যসেই লোকেরাই যারা গতকাল নিও-লিবারালিজম" কে বলেছিল "একমাত্র" সমাধানের রাস্তা, বলেছিল অর্থনৈতিক ব্যাপারে রাষ্ট্রের নাক গলানো কমিয়ে ফেলা দরকার, তারাই আজ রাষ্ট্রকে আরো আরো বেশি বেশি ক'রে হস্তক্ষেপ করতে বলছে
আরো রাষ্ট্র----আরো নৈতিকতা', ব্যাস, তাহলেই পুঁজিবাদ চাঙ্গা! এই মিথ্যেটাই তারা আজ আমাদের খাওয়াতে চাইছে

পুঁজিবাদ কি তার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে?

আসল কথা হল যে-সংকট আজ বিশ্বপুঁজিবাদকে ছাড়খার ক'রে দিচ্ছে তার সূচনা ইউএসেতে ২০০৭-র গ্রীষ্মকালে আবাসনশিল্পের ফানুসটা ফাটতে শুরু করার মধ্যে দিয়ে হয়নি৪০ বছরেরও বেশি সময় ধ'রে একটার পর একটা মন্দা এসেছে যথা ১৯৬৭. ১৯৭৪, ১৯৮১, ২০০১-র মন্দাদশকের পর দশক ধ'রে বেকারি একটা স্থায়ী এবং মহামারীর মত সংক্রমনে পরিণত হয়েছে, শোষিত মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর নেমে এসেছে পাহাড় প্রমান আক্রমণ কিন্তু কেন?
কারণ পুঁজিবাদ এমনই এক ব্যবস্থা যেখানে উপাদন করা হয় মানুষের প্রয়োজনের জন্য নয়, তা হয় বাজারে বিক্রির এবং লাভের জন্যসংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হাজারো চাহিদা পূরণ হয় না কারণ তাদের সাধ্য নেই বা সোজা ক'রে বললে তাদের ক্রয় ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত যদি পুঁজিবাদ সংকটে পড়ে থাকে, যদি কোটি কোটি মানুষকে অসহনীয় ক্ষুধা আর দুর্দশার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হতে হয়, তবে তার কারণ এই নয় যে পুঁজিবাদ যথেষ্ট উপাদন করতে পারছে না, বরং বিপরীত, এ ব্যবস্থায় যতটা বিক্রি হতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি পাদিত হচ্ছে যতবার বুরজোয়ারা সংকটে পড়ছে ততবার তারা বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়া-নেওয়া  আর কৃত্রিম বাজার তৈরির আশ্রয় নিচ্ছেএভাবে সাময়িকভাবে বেঁচে উঠতে গিয়ে পুঁজিবাদ তার ভবিষ্যতকে আরো বিপদগ্রস্ত ক'রে তুলছে, কেননা শেষ পর্যন্ত এই বিপুল ঋণ শোধ করতে হবে! বর্তমানে ঠিক এটাই ঘটে চলেছেগত কয়েকবছরের অভাবনীয় সমৃদ্ধি'-র ভিত্তিই হ'ল এই ঋণবিশ্ব অর্থনীতি "ঋণ"-র ওপর ভর করেই বেঁচে ছিল আর এখন যখন সেই ধার শোধ করার পালা তখন তা তাসের ঘরের মতই ভেঙে পড়লব্যাঙ্কারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ, ব্যবসায়ীদের ফাটকাবাজি বা রাজনীতিকদের পরিচালনার ত্রুটির জন্যই পুঁজিবাদী অর্থনীতির এই বিপর্যয় তা কিন্তু নয়;এরা পুঁজিবাদের নিয়মগুলোই প্রয়োগ করেছে কিন্তু সমস্যাটা এই যে পুঁজিবাদের এই নিয়মগুলো নিজগুনেই এমন যে তা এই ব্যবস্থাটাকে ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যায়আর এই কারণেই রাষ্ট্র আর তার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলো যতই কোটি কোটি টাকা বাজারে ঢালার চেষ্টা করুক না কেন তাতে কোন ইতিবাচক বদল আসবে নাবরং আরো ভয়াবহভাবে ঋণের ওপর ঋণের স্তুপ জমতে থাকবেব্যাপারটা তেল ঢেলে আগুন নেভানোর সামিলএরকম বেপরোয়া এবং নিষ্ফলা পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে বুরজোয়াদের অক্ষমতাটাই প্রকট হয়ে উঠছেআজই হোক বা দুদিন পর, এভাবে টাকা ঢেলে সংকট কাটানোর প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হতে বাধ্যএতে ক'রে পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রকৃত পুনরুদ্ধার কোনমতেই সম্ভব নয়বামপন্থী বা দক্ষিণ পন্থী কারো কোন পলিসিই আর এই মারণ ব্যাধিতে র্জজরিত ব্যবস্থাটাকে রক্ষা করতে পারেনা
পারমানবিক বোমা নয়, ভয়ংকর জীবাণু বোমাও নয়- স্রেফ একটা বুদ্বুদের বিস্ফোরণেই বিশ্বপুঁজিবাদ ও সাম্রজ্যবাদের কেন্দ্রভূমি আমেরিকার অর্থনীতি এখন বিপর্যস্ত বুদ্বুদটির জন্ম ২০০১ সালের কোন এক সময় আর মৃত্যু ২০০৭ সালের জুলাই মাসেএর নাম গৃহায়ন বুদ্বুদ বা Housing Bubbleদৈনিক পত্র-পত্রিকার অর্থনীতির পাতায় চোখ বোলানের সুবাদে স্বপ্নভূমি আমেরিকার অর্থনীতি বিষয়ক খবরে প্রায়ই সাবপ্রাইম মর্টগেজ, হাউসিং বাবল ইত্যাদি শব্দাবলীর বহুল ব্যবহারে প্রথমে কৌতুহলী, পরবর্তীতে এর তাৎপর্য বুঝতে পেরে চিন্তিত ও মর্মাহত এবং অবশেষে আর দশটা বিষয়ের মতই এক্ষেত্রেও আমরা যখন ইতোমধ্যে বিরক্ত তখনই বুম!!!!!!! ওয়াল স্ট্রীট সহ সারাবিশ্বে বড় বড় সব শেয়ার বাজারের পতন, রাশিয়ার মত দেশের শেয়ার বাজার কয়েকদিনের জন্য একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া, গতশতকের ত্রিশের দশকের মত মহামন্দার আশংকায় হাজার বিলিয়ন ডলারেও বেশী পাবলিক মানির শ্রাদ্ধ করে Freddie Mac, Fannie Mae কিংবা সর্বশেষ American International Group (AIG) এর মত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাইভেটাইজেশানের স্বর্গভূমি আমেরিকার সরকার কর্তৃক জাতীয়করন......ইত্যাদি আমাদের মাঝে নতুন করে আগ্রহ তৈরী করেছেএ সুযোগেই আমরা চেষ্টা করব এই ঘটনাগুলোর প্রকৃত কার্য-কারণ অনুসন্ধানের
বুদ্বুদের জন্ম:
পুঁজিবাদি অর্থনীতিতে ঋণ জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণএমন গুরুত্বপূর্ণ যে কোন কোন মহান পুঁজিবাদী ঋণকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির মত একটি মৌলিক অধিকার বলে প্রচার করার চেষ্টা করেনতো এক মৌলিক অধিকার বাসস্থান বন্ধক রেখে আরেক 'মৌলিক' অধিকার ঋণ নেয়া- এই নিয়ে ফাইনান্সিয়াল জুয়া খেলার পরিণতিতেই বুদ্বুবটির জন্ম, যদিও পুঁজিবাদীরা এই জুয়া খেলাটিকে ফাইনান্স, বিনিয়োগ, ষ্টক ব্যবসা ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর নামে অভিহিত করতে ভালোবাসেবিষয়টিকে পরিস্কার করার জন্য বুদ্বুদের জন্ম প্রক্রিয়াটিকে আমরা ৫টি ধাপে ভাগ করতে পারি:
ধাপ ১: বিভিন্ন বাড়ির মালিকের ঘর-বাড়ি বন্ধক(Mortgage) রেখে ঋণ দেয়ার পর ব্যাংকগুলো সেই ঋণকে সিকিউরিটি(Securities) তে পরিণত করলোএই সিকিউরিটির নাম হলো Mortgage Based Securities(MBS)এই ধরনের সিকিউরিটি ক্রয়করার মানে হলো ঋণের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থের অধিকার ক্রয় করাধরা যাক 'A' একটি কমার্শিয়াল ব্যাংক, 'B' একজন বাড়ির মালিক যার ঋণের প্রয়োজন এবং 'C' একজন বিনিয়োগকারী যার হাতে বিনিয়োগ করার মত উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে'B',ধরা যাক, 'A' এর কাছে তার বাড়ি বন্ধক রেখে বার্ষিক ১০% সুদে ১০ লক্ষ ডলার ঋণ নেয়'B' যদি ভালো গ্রেডের ঋণ গ্রহীতা হয় অর্থাৎ তার ক্রেডিট হিষ্ট্রী যদি 'AAA' গ্রেডের হয় তবে ব্যাংক 'A' কে তিনি প্রতিবছর সুদ-আসল মিলিয়ে ১.১ লক্ষ ডলার করে কিস্তি পরিশোধ করবেনফলে ১০ বছর শেষে ব্যাংকটি মোট ১১ লক্ষ ডলার পাবেব্যাংকটির পরিচালক ঠিক করলো সে বাড়তি ১ লক্ষ ডলারের জন্য এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা না করে বিনিয়োগকারী 'C' এর কাছ থেকে এককালীন ১০.৫০ লক্ষ ডলার নিয়ে 'C' কে 'B' এর কাছ থেকে পুরো ঋণের কিস্তি গ্রহনের অধিকার দিয়ে দেবেএভাবে ব্যাংকটি আসলে 'B' এর ঋণকে সিকিউরিটিতে পরিণত করলো যার নাম হলো Mortgage Based Securities বা MBSকিন্তু ব্যাংকটি এভাবে সবসময় 'C' এর মতো ক্রেতা নাও পেতে পারে কেননা ঋণগ্রহীতা 'B' এর ক্রেডিট হিষ্ট্রী(Credit History) না জেনে বিনিয়োগকারী সেই MBS এর উপর আস্থা রাখতে পারবে নাএই ক্ষেত্রে আবির্ভাব হলো একদল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারের

ধাপ ২: ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারদেরকে এক্ষেত্রে বলা হয় Special Investment Vehicle বা SIVSIVকোন এক বা একাধিক ব্যাংকের MBS গুলোকে কিনে নিয়ে সেগুলোকে একত্রিত করে আবার ঋণের ঝুঁকি অনুসারে ৩ টি ভাগে ভাগ করে:
1)
ইকুইটি বন্ড(Equity Bond)
2)
মেজানাইন বন্ড (Mezanine Bond)
3)
ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড (Investment Grade Bond)
SIVগুলো হয়তো ব্যাংকের সকল MBS কে এমন ভাগে ভাগ করলো যে ৭০% MBS হলো ইকুইটি বন্ড, ২০% হলো মেজানাইন বন্ড আর বাকি ১০% হলো ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ডভালো ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক বন্ড থেকে হয় ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ডফলে এর ঝুঁকি সবচেয়ে কম, আর ঝুঁকি সবচেয়ে কম বলেই এর বিপরীতে আয়ও সবচেয়ে কমঅন্যদিকে খুব দুর্বল ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক ( যে মর্টগেজকে বলা হয় সাবপ্রাইম মর্টগেজ) বন্ডকে বলা হচ্ছে ইকুইটি বন্ড যেহেতু Subprime Mortgage এর ডিফল্ট হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী , সুতরাং এই মর্টগেজ ভিত্তিক সিকিউরিটিস এর ঝুঁকিও বেশী এবং এগুলোর বিপরীতে আয়ও বেশীমেজানাইন বন্ডের অবস্থান মাঝামাঝিএভাবে মর্টগেজগুলোকে বিভিন্ন স্তরে বিভিক্ত করে ঋণের ঝুঁকি কোন একটি ব্যাংকের কাছ থেকে একাধিক বিনিয়োগকারীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যে বন্ডগুলো তৈরী করা হলো এগুলোকে সাধারণভাবে বলা হয় CDO বা কো-ল্যাটারাল ডেব্ট অবলিগেশান(Collateral Debt Obligation)ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ডের ঝুঁকি কম বলে SIV গুলোর পক্ষে এগুলো কিনতে ইচ্ছুক বিনিয়োগকারী বা ইনভেস্টার প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে সমস্যা হয় নাঝুঁকিবহূল ইকুইটি বা মেজানাইন বন্ডগুলো কিনবে কে?
ধাপ ৩: হেজ ফান্ড(Hedge Fund)গুলো প্রবেশ করে ঠিক এই পর্যায়েপ্রথম ধাপের ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোই বিভিন্ন ভাবে এই হেজ ফান্ডগুলো গঠন করেউদ্দেশ্য উচ্চ ঝুঁকির CDO গুলো নিয়ে বাণিজ্য করা ব্যাংক হয়তো প্রাথমিক ভাবে ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে হেজ ফান্ডটি গঠন করলোএই হেজফান্ড তখন উচ্চঝুঁকির CDO গুলো ক্রয় করে
গৃহায়নশিল্পের সুসময়ে ঘর-বাড়ির বাড়তি দামের কারণে সেই সব ক্রমশ বাড়তে থাকা মূল্যের বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণগ্রহীতার ডিফল্টার হওয়ার ঝুঁকিও কমতে থাকেকেননা ব্যাংক/CDOএর মালিক যে কোন সময় উচ্চমূল্যে বাড়িটি বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় করে নিতে পারবেফলে ইকুইটি বন্ডের অবস্থা বেশ রমরমা হয়ে উঠেযে বাড়িটির মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে ইকুইটি বন্ডের যাত্রাশুরু সেই বাড়ির মূল্য আরও বাড়বে এই আশায় (ঋণগ্রহীতা বাড়ির মালিকের ক্রেডিট হিস্ট্রি যাই থাকুক না কেন) উচ্চঝুঁকির ইকুইটি বন্ডগুলোর দাম বাড়তে লাগলো চড়চড় করেফলে হেজফান্ডগুলোকে এখন আর সেই ব্যাংকের দেয়া প্রাথমিক ফান্ডের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না, বিভিন্ন উৎস থেকেই সে ফান্ড পাচ্ছে
ধাপ ৪: হেজ ফান্ডের আসল ভুমিকা এ ধাপেই ব্যাংক যেমন তার ঝুঁকি SIV-গুলোর উপর দিয়ে দেয়, এসআইভি-গুলো যেমন তার ঝুঁকি হেজ ফান্ডের উপর দিয়ে দেয়, হেজ ফান্ডগুলোও তেমনি সেই ঝুঁকিপূর্ণ বন্ডগুলো নিজের হাতে রাখেনা তারা এই CDO-গুলোকে কোন ব্যাংকের কাছে জমা রেখে ব্যাংক থেকে ধার করে এবং সেই অর্থ আবার বিনিয়োগ করেইকুইটি সিডিও-গুলোর মূল্য যত বেশী হবে হেজফান্ড তার বিনিময়ে ব্যাংক থেকে তত বেশী অর্থ পাবেএকারণে হেজ ফান্ডের ম্যানেজারদের উপর চাপ থাকে ইকুইটি সিডিও-গুলোর মূল্য বাড়িয়ে দেখানোসিডিও-গুলোর আসল ভিত্তি যে বাড়িটি, এতগুলো ধাপ পেরিয়ে এসে সেই বাড়ির মূল্যের সাথে আর বাঁধা থাকেনা সিডিও-এর মূল্য
ধাপ ৫: হেজ ফান্ড-গুলোকে ঋণদানকারী ব্যাংকগুলো ও হাউসিং মার্কেট চড়া থাকার কারণে এবং ভবিষ্যতে আরও চড়া হলে এগুলো বিক্রি করে প্রভূত মুনাফা লাভের প্রত্যাশায় নির্দ্বিধায় অতিমূল্যায়িত সাব-প্রাইম মর্টগেজ এর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা সিডিও-গুলোর বিনিময়ে ঋণ দিতে থাকেসেই টাকায় হেজ-ফান্ডগুলো এসআইভি-এর কাছ থেকে বেশী বেশী সিডিও নিতে থাকে, ১ম ধাপের ব্যাংকগুলোও মর্টগেজের কালি শুকানোর আগেই তার সমস্ত ঝুঁকি সহ মর্টগেজগুলোকে এসআইভি এর হাতে হস্তান্তরেরের সুযোগে আরো বেশী বেশী করে সাব-প্রাইম ঋণ দিতে থাকে

বুদ্বুদের বিস্ফোরণ :
এভাবেই প্রত্যাশার সাগরে জন্ম নেয়া বুদ্বুদ একেবারে আকাশে উঠে যেতে থাকেকিন্তু সাব-প্রাইম ঋণ উচ্চসুদের হওয়ার কারণে এবং অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এর গ্রহীতা হওয়ায়, একসময় দেখা যায় তারা আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে নাস্বাভাবিক ভাবেই সাব-প্রাইম মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা সিকিউরিটিগুলোর বর্তমান মালিক (ব্যাংক বা কোন ব্যাক্তি বিনিয়োগকারী) যখন বাড়িটি বিক্রি করতে চাইলো তখন সবাই মিলে বাড়ি বিক্রিকরার হিড়িকের কারণে সে উপযুক্ত মূল্য পেলনা এমনকি তার হাতে থাকা সিকিউরিটিগুলো বিক্রি করতে গিয়েও সে ক্রেতা পেলনাকেননা কেউই তখন জানেনা এই সিকিউরিটিস এর ভিত্তি মূল্য আসলে কতযখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় চলছিল, তখন কেউ ভিত্তিমূল্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনিকিন্তু সাবপ্রাইম ঋণগ্রহীতার ডিফল্টার হওয়া এবং হাউসিং বাজার পরে যাওয়ার কারণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের সিকিউরিটি আক্ষরিক অর্থেই টয়লেট পেপারে পরিণত হলোকেননা ফাইনান্সের দুনিয়ায় এর আর কোন মূল্য নেই, ভবিষ্যতে উচ্চমূল্য পাওয়ার আশা না থাকায় কেউ আর এগুলো কিনতে চাইছে না
বুদবুদের প্রথম বড় ধরনের ঝাঁকিটি অনুভুত হয় ২০০৭ সালের জুলাই মাসে যখন দু'টি বিয়ার স্টার্ন হেজ ফান্ডের একটি তার ৯০% মূল্য হারায় আর আরেকটি একেবারে মূল্যহীন হয়ে যায়এই ধরণের হেজ ফান্ডগুলোর সাথে ব্যাবসা করতো এমন ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বড় বড় ব্যাংকগুলোও স্বীকার করতে শুরু করলো যে তারাও বিষাক্ত সাব-প্রাইম ঋণের স্বীকারফাইনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশানগুলোর মাঝে লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে এলো- কেননা কেউ জানেনা কার হাতে কতটুকু বিষাক্ত মর্টগেজ আছেসারা বিশ্বের ফাইনান্স জগতে দ্রত আতংক ছড়িয়ে পড়লেকেননা তারা প্রত্যেকেই মর্টগেজ নিয়ে এই জুয়া খেলার সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্তসর্বব্যাপি একটা ভয় ছড়িয়ে পড়লো যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২.৫% এর নীচে নেমে যাবে অর্থাৎ মন্দার কবলে পড়বে
এ মাসের মাঝামাঝি এসে অবশেষে ঘটনাটি ঘটতে শুরু করেউপরোক্ত হেডলাইনগুলোর মতো অসংখ্য হেডলাইনে সংবাদ সংস্থাগুলো ভেসে যেতে থাকেসবারই একই কথা- ১৯২৯ এর পর আবার আসছে মহামন্দাবিয়ার স্টার্ন তার দুটি হেজ ফান্ডকে রক্ষা করে ৩.২ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়েGoldman Sachs তার আলফা নামের হেজ ফান্ডকে রক্ষা করে ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়েএরপর ২০০৭ সালের শেষ দিকে আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট জাতীয়করন করে Freddie Mac আর Fannie Mae কে আর ব্রিটেন জাতীয় করণকরে Northern Rock কেBear Stern তার দুটি হেজ ফান্ডকে রক্ষা করলেও নিজেকে কিন্তু রক্ষা করতে পারেনি২০০৮ এর মার্চ মাসে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ৩০ বিলিয়ন পরিমাণ সরকারী ডলার খরচ করে বিয়ার স্টার্ন কে বেইল আউট( অর্থা? বিপুল পরিমাণ তারল্য বা অর্থ সরবরাহ করা) করেএর পর সেপ্টেম্বরের শুরুতে Lehmen Brothers এর পতন ঘটলে সরকার নিরব থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও তার পরপরই যখন AIG, ১০০০ বিলিয়নের বেশী মর্টগেজ ভিত্তিক সিকিউরিটি ধারনকারী বিশ্বের বৃহত্তম ইনসিউরেন্স কোম্পানীর যখন পতন ঘটে তখন ফেডারেল রিজার্ভ আর বসে থাকতে পারেনি, তারা জনগনের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সেই কোম্পানী এবং তার সম্সত্দ মর্টগেজ ব্যাক্ড সিকিউরিটির জাতীয়করণ করে!এর ফলাফল কি? পুজিঁবাদে যা কিছই ঘটুক না কেন তার ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয় খেটে খাওয়া মানুষএবারের মন্দাক্রান্ত অর্থনীতেও তাই ঘটছেইতিমধ্যেই আমেরিকায় চাকরি হারিয়েছে ৬ লক্ষেরও বেশী শ্রমিক, গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং সবশেষে এই যে প্রাইভেট লসের জাতীয়করণ তার খেসারতও বহন করতে হবে সাধারণ জনগণকে অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে! বিষয়টি লক্ষ করে Financial Times এর কলামিস্ট Willem Buit বলছেন:
"বর্তমান বাস্তবতা কি এমন যে, লগ্নীপুঁজি নিয়ন্ত্রীত অর্থনীতিতে যখন সবকিছু ভাল চলে, তখন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো বেসরকারী মুনাফা কামায় আর যখনই কোন সমস্যা হাজির হয় তখন সাময়িক ভাবে সেই সমস্যাগ্রস্থ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িক সরকারীকরণ করা হয়, যার ফলে সমস্ত লসের দায়ভার বহন করে জনগণ? তাই যদি হয়, তবে এগুলোকে চিরস্থায়ীভাবেই জাতীয়করণ করা হচ্ছে না কেন? "
ফাইনান্সিয়ালাইজেশানের সংকট:
গৃহায়ণ বুদবুদের জন্ম, বিভিন্ন ফাইনান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টের মাধ্যমে এর আকাশে উঠা, এবং অবশেষে সাব-প্রাইম মর্টগেজের ঋণ পরিশোধের অক্ষমতা ও হাউসিং সেক্টরের পতন ইত্যাদির কারণে বুদবুদটির বিস্ফোরণ - চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, উৎপাদনমুখী অর্থনীতি থেকে যতই আলাদা স্বাধীন সত্ত্বা হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হউক না কেন ফাইনান্সিয়ালাইসেশান কখনই উৎপাদনের অর্থনীতির বিকল্প হতে পারেনা এবং পুজিঁবাদী অর্থনীতির যে মৌলিক সংকট অন্তর্নিহিত, তার সত্যিকারের সমাধান করতে পারেনাপুঁজিবাদী রিয়েল ইকোনমি'র সংকট, মন্দা বা স্থবিরতার সময় ফাইনান্সিয়ালাইজেশান সেক্টরের বিকাশের মাধ্যমে সাময়িক ভাবে কিছু অনুৎপাদনশীল সেক্টরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তার মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা সম্ভব হলেও পরিণামে তা আরো গভীর সংকটের সৃষ্টি করে
বর্তমান সাম্রজ্যবাদী অর্থনীতি উৎপাদন ও বিনিময়ের এক বিশ্বব্যবস্থা যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীকে শোষণের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত মূল্যের বৈশ্বিক উৎপাদন হয় আর এই উদ্বৃত্ত মূল্য উৎপাদনের নিরিখে ফাইনন্সিয়ালাইসেশান একদিকে বিশ্বপুঁজিবাদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় এবং অন্যদিকে পরজীবি একটি প্রক্রিয়াপরজীবি- কেননা এটি কোন উদ্বৃত্ত তৈরী করেনা বরং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উদ্বৃত্তে ভাগ বসায় প্রয়োজনীয়- কেননা উদ্বৃত্ত মুনাফার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীভবন এবং তার মাধ্যমে মুনাফা তৈরীর নতুন রাস্তা তৈরী করা ও দ্রুত পুঁজি লগ্নি করে মুনাফা তুলে নেয়া আর ঝুঁকি দেখলে আরও দ্রুত সেই লগ্নি পুঁজি প্রত্যাহার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণযেকারণে ফাইনান্সিয়ালাইসেশানের যুগে, উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, লগ্নি পুঁজি আজকে থাইল্যান্ডের রিয়েল এস্টেট মার্কেটে গেল তো কাল সেখান থেকে মুনাফা তুলে নিয়ে ব্রাজিলের ইথানল উৎপাদনে লগ্নিকৃত হলো আবার সুযোগ বুঝে আমেরিকার মর্টগেজ মার্কেটে লগ্নী হলোএর সাথে আরেকটি বিষয় যুক্ত- লগ্নী পুঁজির স্বল্পমেয়াদী আগমন ও বহির্গমণের মাধ্যমে কোন একটি দেশের স্থানীয় পুঁজিকে বশবর্তী রাখা হয় ও পুঁজির পূণর্বিন্যাস করা হয়- একটা বৃহৎ শিল্প কারখানাকে ঋণ না দেয়া কিংবা পুঁজি প্রত্যাহার করে সর্বসান্ত করে ফেলার হুমকীর মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় আর এই ধরণের ফাইনান্সিয়াল শৃঙ্খলা তৃতীয় বিশ্বের সবগুলো দেশের উপরেই আরোপ করা হয়- আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত আইএমএফ যাতে মূল ভূমিকা পালন করেযেকারণে ফাইনান্সিয়াল দুনিয়ার অস্থিরতা বর্তমান পুঁজিবাদের বিশ্বায়িত ও লগ্নী পুঁজি নিয়ন্ত্রিত বাস্তবতা এক ধ্রুব সত্য

No comments:

Post a Comment