Sunday, June 5, 2011

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও আমরা বোকা বান্দা !!??


একজন মানুষ জীবনে যা উপার্জন করে আর যা ভোগ করে এই দুইয়ের ব্যবধান তার প্রকৃত সঞ্চয়। এই সঞ্চয়ই প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করছে আর প্রগতির গতিকে সচল রেখে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থায় অর্থনীতিকে অর্থশাস্ত্র শাসন করছে। যে কারণেবর্তমান দুনিয়ায় উৎপাদনের দিক থেকে এশিয়ার অবদানই বেশী হলেও অর্থনৈতিক ক্ষমতার দিক থেকে আমেরিকা সবচেয়ে এগিয়ে। আর এটি খুব সহজেই সম্ভব হয়েছে বর্তমান মুদ্রা ব্যবস্থার কারণে।

আমেরিকার অর্থনীতি অহেতুক সমৃদ্ধ বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় ডলার নির্ভরতার কারণে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকর্পোরেট বিজনেস হাউজ এবং ব্যক্তি আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাংকে প্রচুর ডলার রিজার্ভ রাখেফলে আমেরিকার সব ব্যাংকেই বিশেষ করে বড় বড় ব্যাংক গুলিতে ঋণ দেবার মত অঢেল অর্থ থাকে। ব্যাংক গুলি বিভিন্ন নামে ও কৌশলে জনগনের মধ্য অতি সহজে বিপুল পরিমান ঋণ বিতরণ করেফলে জনগনের হাতে খরচ/ভোগ করার জন্য প্রচুর অর্থ আসে। এর ফলে জনগনের গড় ভোগ বেড়ে যায় সকল ক্ষেত্রেই। আর হাতে অথের্র সমাগম থাকায় কমের্র ও সৃষ্টি হয় ব্যাপক। এভাবেই আমেরিকার জনগন অন্যের অর্থে (বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনগনের) ভোগ বিলাস করে আসছিলমুলত মুদ্রা ব্যবস্থার কারণেই নিরবে এই ঘটনা ঘটে আসছিল।
ব্যাংক গুলির হাতে প্রচুর অর্থ থাকায় তারা প্রাইম ও সাব প্রাইম মার্কেটের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের মচ্ছব চালায়। স্বাভাবিক ভাবেই জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রচুর আমদানীও করতে হয়। আবার এই আমদানী যেসব দেশ থেকে করা হয় ঐসব দেশের অর্থই আমেরিকার ব্যাংকগুলির মাধ্যমে জনগনের হাত হয়ে আমদানীতে ব্যবহৃত হয়। মানে যাদের অর্থ তাদের কাছ থেকেই কেনা আবার তাদের অর্থেইঅর্থাৎ অথের্র মালিক বা উৎপাদক একজন আর ভোক্তা আরেকজন (!)। বিশাল এক মিথ্যের ওপর দাড়িয়ে থাকা আমেরিকার অর্থনীতি। খুব সহজে ঋণ পাওয়া যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে কারোরই ঋণ খেলাপি হওয়ার কথা নয় কারণ প্রত্যেকেরই ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়পুরাতন ঋণ পরিশোধ করে অধিক পরিমানে নতুন নতুন ঋণ গ্রহণকই এর তেলে কই ভাজা আর কি! (বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট !!)। ব্যাংক গুলোও বছর শেষে বিপুল মুনাফা করেব্যাংক কর্মীরা উচ্চ হারে বেতন-বোনাস পেতে থাকেচারি দিকে বাহ্‌ ! বাহ্‌ !!
উৎপাদনের  অর্থনীতিতে ঋণ জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। এই প্রয়োজন থেকেই ব্যাংক নামক মধ্যসত্ত্বভোগী প্রতিষ্ঠানের জন্ম যাদের মূল ঘোষিত কাজ হচ্ছে বিনিয়োগকারী ও ঋণগ্রহীতাদের মাঝে সংযোগ ঘটিয়ে ঝুকি হ্রাসের বিনিময়ে উদ্ভুত মুনাফার একটা অংশ ভোগ করা। এই সরল সমীকরনে ব্যাংক এর জন্ম হলেো কালক্রমে ব্যাংক নিজেই তো বটেই মাঝখানে আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয় ঐ ঋণকে কেন্দ্র করে আরো ব্যবসা ক্ষেত্রের জন্ম হয় যা নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত। এদর আবার কিছু কিছুর নৈতিক বা আইনহত কোন ভিত্তিই নেই, যেমন হেজ ফান্ড।
ব্যাংক উদ্বৃত্ত তহবিল সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ঋণ হিসাবে বিতরন করে, বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমান সূদ পায়, অপরদিকে তহবিলের মালিককে ঐসূদ হতে কিছু কম সূদ দেয়। এই সূদের হারের ব্যবধান হতেই ব্যাংক তার পরিচালন ব্যায় মিটিয়ে মুনাফা করে। কিন্তু ব্যাংক ঋণ প্রদানের পর ক্রমে তাকে নিভর্র করে কাল্পনিক হিসাব সর্বস্ব আর্থিক লেন-দেন ব্যবস্থা গড়ে উঠে যা রীতিমত জুয়া খেলা। যদিও পুঁজিবাদীরা এই জুয়া খেলাটিকে ফাইনান্সবিনিয়োগষ্টক ব্যবসা ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর নামে অভিহিত করেন। একটা পরিসংখ্যান দিলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে; ২০০৬ সালে সমগ্র পৃথিবীর মোট অর্থনৈতিক উৎপাদন ছিল ৪৭ ট্রিলিয়ন মা:ডলার। অথচ বিশ্বের শেয়ার বাজারের মুলধনীকরণ হয়েছে ৫১ ট্রিলিয়ন মা:ডলার, আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক বন্ডের মূল্য ছিল ৬৮ ট্রিলিয়ন মা:ডলার, অন্যান্য আর্থিক দলিলের মূল্য ছিল ৪৭৩ ট্রিলিয়ন মা:ডলার। ৪৭ ট্রিলিয়ন মা:ডলার এর বাস্তব এই উৎপাদনকে কেন্দ্র করে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের নামে যে জুয়া খেলা হয়েছে তা প্রধানত আমেরিকায় বা আমেরিকান নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষের খুব একটা নিয়ন্ত্রন ছিলনা বা এখনো নেই।

এই অন্যান্য আর্থিক দলিলগুলোর জন্ম হয় ব্যাংকগুলি ঘড়-বাড়ি বা মূল্যবান স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিবন্ধক রেখে ঋণ দেবার পর সেই ঋণকে সিকিউরিটিতে পরিণত করে যার নাম Mortgage Based Securities (MBS). বিনিয়োগকারীদের নিকট এই সিকিউরিটি বিক্রয় করে ব্যাংকগুলি আবারও ঋণ বিতরণের তহবিল সংগ্রহ করে। অর্থনীতির নৈতিকতায় কোন উৎপাদন বা মূল্য সংযোজন ছাড়া মুনাফা সৃষ্টির কথা নয়, কিন্তু এই ক্ষেত্রে মুনাফা এবং অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায়। কিন্তু ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট হিষ্ট্রী না জেনে বিনিয়োগকারী সেই MBS এর উপর যাতে আস্থা রাখতে পারে এই সমস্যা সমাধানে আবির্ভাব হলো আরেক মধ্যসত্ত্বভোগী-ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারের-Special Investment Vehicle বা SIVSIV কোন এক বা একাধিক ব্যাংকের SIV গুলোকে কিনে নিয়ে সেগুলোকে একত্রিত করে আবার ঋণের ঝুঁকি অনুসারে ৩ টি ভাগে ভাগ করে:
১)         ইকুইটি Equity Bond)-উচ্চ ঝুকিপুর্ন
২)         মেজানাইন বন্ড (Mezanine Bond)-মধ্যম ঝুকিপুর্ন
৩)         ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড (Investment Grade Bond)-কম ঝুকিপূর্ন

এভাবে মর্টগেজগুলোকে বিভিন্ন স্তরে বিভিক্ত করে ঋণের ঝুঁকি কোন একটি ব্যাংকের কাছ থেকে একাধিক বিনিয়োগকারীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যে বন্ডগুলো তৈরী করা হলো এগুলোকে সাধারণভাবে বলা হয় CDO বা কোল্যাটারাল ডেট অবলিগেশান। ভালো ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক বন্ড থেকে হয় ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড। দুর্বল ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক ( যে মর্টগেজকে বলা হয় সাবপ্রাইম মর্টগেজ) বন্ডকে বলা হয় ইকুইটি বন্ড। মেজানাইন বন্ডের অবস্থান মাঝামাঝি।  ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ডের ঝুঁকি কম বলে সহ্‌জেই তার ক্রেতাও মেলে কিন্তু ঝুকিবহুল ইকুইটি বা মেজানাইন বন্ড নিয়ে হয় আসল খেলা!
এই পর্যায় প্রথম ধাপের ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোই বিভিন্ন ভাবে এই হেজ ফান্ড গঠন করে উচ্চ ঝুঁকির CDO গুলো নিয়ে বাণিজ্য করার জন্য। যেহেতু ঝুকি বেশী তাই CDO গুলিতে বিনিয়োগে লাভও বেশী ফলে হেজ ফান্ডে বিনিয়োগকারীরও অভাব হয়নাবিভিন্ন উৎস থেকেই সে ফান্ড পায়। যে বাড়িটির মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে ইকুইটি বন্ডের যাত্রা শুরু সেই বাড়ির মূল্য আরও বাড়বে এই আশায় উচ্চঝুঁকির ইকুইটি বন্ডগুলোর দাম বাড়তে থাকে।
ব্যাংক যেমন তার ঝুঁকি SIV-গুলোর উপর দিয়ে দেয়এসআইভি-গুলো যেমন তার ঝুঁকি হেজ ফান্ডের উপর দিয়ে দেয়হেজ ফান্ডগুলোও তেমনি সেই ঝুঁকিপূর্ণ বন্ডগুলো কোন ব্যাংকের কাছে জমা রেখে ব্যাংক থেকে ধার করে এবং সেই অর্থ আবার বিনিয়োগ করে। ইকুইটি সিডিও-গুলোর মূল্য যত বেশী হবে হেজফান্ড তার বিনিময় ব্যাংক থেকে তত বেশী অর্থ পাবে। সিডিও-গুলোর আসল ভিত্তি যে বাড়িটিএতগুলো ধাপ পেরিয়ে এসে সেই বাড়ির মূল্যের সাথে আর বাঁধা থাকেনা সিডিও-এর মূল্য। ব্যাংকগুলো ও হাউসিং মার্কেট চড়া থাকার কারণে এবং ভবিষ্যতে আরও চড়া হলে এগুলো বিক্রি করে প্রভূত মুনাফা লাভের প্রত্যাশায় নির্দ্বিধায় অতিমূল্যায়িত সাব-প্রাইম মর্টগেজ এর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা সিডিও-গুলোর বিনিময়ে ঋণ দিতে থাকে। সেই টাকায় হেজ-ফান্ডগুলো এসআইভি-এর কাছ থেকে বেশী বেশী সিডিও নিতে থাকে১ম ধাপের ব্যাংকগুলোও মর্টগেজের কালি শুকানোর আগেই তার সমস্ত ঝুঁকি সহ মর্টগেজগুলোকে এসআইভি এর হাতে স্থানান্তরের সুযোগে আরো বেশী বেশী করে সাব-প্রাইম ঋণ দিতে থাকে। এ এক ভানুমতির খেল
এভাবেই কাল্পনিক হিসাবের উপড় ভড় করে অধিক লাভের প্রত্যাশার বেলুন একেবারে আকাশে উঠতে থাকে। কিন্তু সাব-প্রাইম ঋণ উচ্চসুদের হওয়ার কারণে এবং অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এর গ্রহীতা হওয়ায়একসময় দেখা যায় তারা আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না (ঠিক বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট গ্রহীতাদের মতই!)। স্বাভাবিক ভাবেই সাব-প্রাইম মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা সিকিউরিটিগুলোর বর্তমান মালিক (ব্যাংক বা কোন ব্যাক্তি বিনিয়োগকারী) যখন বাড়িটি বিক্রি করতে চাইলো তখন সবাই মিলে বাড়ি বিক্রিকরার হিড়িকের কারণে সে উপযুক্ত মূল্য পেলনা এমনকি তার হাতে থাকা সিকিউরিটিগুলো বিক্রি করতে গিয়েও সে ক্রেতা পেল না। কেননা কেউই তখন জানেনা এই সিকিউরিটিস এর ভিত্তি মূল্য আসলে কত। যখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় চলছিলতখন কেউ ভিত্তিমূল্যের যথার্থতা নিয় পে্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু সাবপ্রাইম ঋণগ্রহীতার ডিফল্টার হওয়া এবং হাউসিং বাজার পরে যাওয়ার কারণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের সিকিউরিটিগুলো আক্ষরিক অর্থেই টয়লেট পেপারে পরিণত হলো। কেননা এর আর কোন মূল্য নেই,ভবিষ্যতে উচ্চমূল্য পাওয়ার আশা না থাকায় কেউ আর এগুলো কিনতে চাইছে না।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল নিয়ন্ত্রণের ফলে এই ঘটনা ঘটেছেআসলে এই শিথিল নিয়ন্ত্রন আমেরিকার অজ্ঞাতে নয় বরং জ্ঞাতসারে এবং পরিকল্পিত ভাবে। অবশ্য এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য খুব বেশী প্রচেষ্টার দরকার হয়নিবৈশ্যিক মুদ্রা ব্যবস্থার ফলে বরং তাদের ঘড়ের দুয়ারে এসে সুযোগ ধরা দিয়েছে। সেই সুযোগে তারা হয়ে গেছে আমানতের খেয়ানতকারী। আমেরিকা তার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের অথের্র নিরাপত্তার বদলে নিজ দেশের জনগনের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা করেছেতাই রাষ্ট্র হিসাবে আমেরিকা তার জনগনের কাছে বাহবার দাবীদার তো বটেই!
বর্তমান এই নিয়মবদ্ধ আর্থিক অনাচারের ফলে পৃথিবীর উৎপাদন ভোগ করে যারা ন্যায্যত তারা তার প্রাপক নয়কেবল মাত্র বৈশ্বিক লেন দেন ব্যাবস্থায় ডলার ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবেই আমেরিকায় অর্থনৈতিক ফানুস গড়ে উঠেছে। এই সমস্যার ন্যায় সঙ্গত সমাধান আমেরিকার ব্যাংকে জমাকৃত বিভিন্ন দেশের ডলার রিজার্ভ ফিরিয়ে আনাযদিও তা এই মহুর্তে সম্ভব নয়। তাই ইউরোর মত আরো বিভিন্ন আঞ্চলিক মুদ্রার প্রচলন করা দরকার তাতে অন্তত কিছুটা ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে। যদিও তাতে আমেরিকার অর্থনীতিতে এক কেয়ামত হয়ে যাবে আর তা হওয়াও উচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি আমেরিকার ব্যাংকগুলিতে অন্যান্য দেশের ন্যায় একই নিয়মে শ্রেনীকরন করা হয় তাহলে সম্ভবত সর্বোচ্চ শ্রেনীকৃত ঋণের দেশে হবে আমেরিকা।

যে সংকট আজ বিশ্বপুঁজিবাদকে ছাড়খার করে দিচ্ছে তার সূচনা ইউএসএ তে ২০০৭ এর গ্রীষ্মকালে আবাসন শিল্পের ফানুস ফাটতে শুরু করার মধ্যে দিয়ে হয়নি। বরং ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটার পর একটা মন্দা এসেছে যথা ১৯৬৭. ১৯৭৪১৯৮১২০০১ এর মন্দা। দশকের পর দশক ধরে একটা স্থায়ী এবং মহামারীর মত সংক্রমণে পরিণত হয়েছেশোষিত মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর নেমে এসেছে পাহাড় প্রমাণ আক্রমণ।
পুজিঁবাদে যা কিছই ঘটুক না কেন তার ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয় খেটে খাওয়া মানুষ। এবারের মন্দাক্রান্ত অর্থনীতিতেও তাই ঘটছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকায় চাকরি হারিয়েছে ৬ লক্ষেরও বেশী শ্রমিকগৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং সবশেষে এই যে প্রাইভেট লোকসানের জাতীয়করণ তার খেসারতও বহন করতে হবে সাধারণ জনগণকে অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে এভাবে বেসরকারী লোকসানের সরকারী দায় গ্রহন সম্পর্কে Financial Times এর কলামিস্ট Willem Buit বলেন, "বর্তমান বাস্তবতা কি এমন যেলগ্নীপুঁজি নিয়ন্ত্রীত অর্থনীতিতে যখন সবকিছু ভাল চলেতখন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো বেসরকারী মুনাফা কামায় আর যখনই কোন সমস্যা হাজির হয় তখন সাময়িক ভাবে সেই সমস্যাগ্রস্থ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িক সরকারীকরণ করা হয়যার ফলে সমস্ত লোকসানের দায়ভার বহন করে জনগণতাই যদি হয়তবে এগুলোকে চিরস্থায়ীভাবেই জাতীয়করণ করা হচ্ছে না কেন? "

স্বভাব গুণে বা দোষে যাই হোকপুঁজির স্বভাব হলো ছড়িয়ে পড়ামুনাফা হয়ে আত্মস্ফীতি ঘটানো। পুজির আন্তর্জাতিক স্বভাব এর প্রাতিষ্ঠানিক প্রকাশ হল আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক এবং একটু দূর অর্থে জাতিসংঘ। পুঁজির সাধারণ স্বার্থ হলো - বাজার অন্তহীনভাবে বেড়ে চলতে হবেতার জন্য অন্তহীনভাবে প্রয়োজনীয় শর্ত তৈরি করে চলতে হবে। বাজার নিরন্তর বাড়া মানে মুনাফায় আত্মস্ফীত পুঁজিকে পুনঃ পু্‌নঃ বিনিয়োগে বসার জায়গা করে দেওয়া। একাজে দেশরাষ্ট্রকনষ্টিটিউশনবাউন্ডারী ইত্যাদি সব বাঁধা হটিয়ে একাকার করে সামনে এগিয়ে বাজারকেভোক্তা সৃষ্টিতে নিরন্তর কাজ করে যেতে হবে। বাজার বাড়লে যে কোন ম্যানুফ্যাকচারিং ট্রেডউৎপাদনে বাড়তে পারবে।
বর্তমান সাম্রজ্যবাদী অর্থনীতি উৎপাদন ও বিনিময়ের এক বিশ্বব্যবস্থা যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীকে শোষণের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত মূল্যের বৈশ্বিক উৎপাদন হয়। আর এই উদ্বৃত্ত মূল্য উৎপাদনের নিরিখে ফাইনন্সিয়ালাইজেশান একদিকে বিশ্বপুঁজিবাদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় এবং অন্যদিকে পরজীবি একটি প্রক্রিয়া। পরজীবি- কেননা এটি কোন উদ্বৃত্ত তৈরী করেনা বরং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উদ্বৃত্তে ভাগ বসায়। উদ্বৃত্ত মুনাফার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীভবন এবং তার মাধ্যমে মুনাফা তৈরীর নতুন রাস্তা তৈরী করা ও দ্রুত পুঁজি লগ্নি করে মুনাফা তুলে নেয়া আর ঝুঁকি দেখলে আরও দ্রুত সেই লগ্নি পুঁজি প্রত্যাহার করে নেয়া। এর সাথে আরেকটি বিষয় যুক্ত লগ্নী পুঁজির স্বল্পমেয়াদী আগমন ও বহির্গমণের মাধ্যমে কোন একটি দেশের স্থানীয় পুঁজিকে বশবর্তী রাখা ও পুঁজির পূণর্বিন্যাস ও নিয়ন্ত্রণ করা। আর এই ধরণের আর্থিক শৃঙ্খলা তৃতীয় বিশ্বের সবগুলো দেশের উপরেই আরোপ করা হয় এবং হচ্ছে। আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ যাতে মূল চালকের ভূমিকা পালন করে কার্যত আমেরিকান তথা পুজিবাদের স্বার্থ সংরক্ষন করে চলেছে।
বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ কে অনেকেই বলেন "আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান"এটা একেবারেই ভুল একটা ধারণা এবং বড় ধরণের ভ্রান্তি। যার প্রমাণ হলো বিশ্বব্যাঙ্ক এর সুদের হার ১% এর নীচে বা বিনাসূদেবেশীর ভাগ চুক্তিতে দেখা যায় তা ০.৭৫%। চুক্তিতে আবারআসল পরিশোধের সময়ও থাকে বেশ লম্বাকমপক্ষে ২০ থেকে ৩৫ বছর। "অর্থলগ্নী" বা অর্থ লাগানো বা টাকা খাটানো বলতে আমরা যা বুঝি  টাকা খাটিয়ে মুনাফা কামানো বা সুদি ব্যবসা। কিন্তু মুনাফা কামানো বা সুদের ব্যবসা বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ এর ঘোষিত বা অঘোষিত লক্ষ্য েোকোনটাই নয়।
১% এরও কম সুদে ২০-৪০ বছর দীর্ঘ মেয়াদী কোন ঋণকে "ফিনান্স ক্যাপিটালের" বিনিয়োগের মূল ফোকাস হলো- এর শর্তাবলী। বিশ্বব্যাঙ্ক হলো সব রূপের পুঁজির আরাম করে বসার কুশন তৈরির প্রতিষ্ঠান। সব ধরণের পুঁজি যাতে আরাম করে বসে স্ব স্ব কারবার করতে পারে তার পরিবেশশর্ত তৈরি করাই এর কাজ। ঐদেশের আইনকনষ্টিটিউশনরাষ্ট্ররাজনৈতিক ব্যবস্থাস্বাথের্র হাত মুচড়ে ধরেপ্রয়োজনে এর বদল ঘটিয়ে গ্লোবাল পুঁজির জন্য সুবিধাজনক আদল দেয়াশর্ত ও পরিবেশ তৈরি করাই বিশ্বব্যাঙ্কের কাজ। এই কাজটা করতে বড় ধরণের ঋণ / বিনিয়োগ লাগেতা সে করে। সবচেয়ে কম সুদে (০.৭৫%) এবং দীর্ঘ মেয়াদী ২০-৪০ বছর এবং কঠিন ও বিরাট শর্ত দিয়ে। সবকিছু সংস্কারবদল করার শর্ত। ঋণে শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন মানে হাত মুচড়ে ধরার ক্ষমতা। এই বিরাট অঙ্কের ঋণ / বিনিয়োগের লক্ষ্য মুনাফা কামানো নয়শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন। বরং লগ্নিপুঁজিসহ সবধরণের পুঁজি যাতে কারবার করতে পারে তার আয়োজন করার ক্ষমতা অর্জন।
পাঁচটা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রুপ গঠিতযা সংক্ষেপে বিশ্বব্যাংক নামে পরিচিত। এই পাঁচটার মধ্যে যার তৎপরতা সবচেয়ে ব্যাপকসবচেয়ে প্রাচীন এর নাম হলো IBRD (International Bank Reconstruction & Development)। অথবা The Bank । বিশ্বব্যাঙ্কের লোন বলতে আমরা যা বুঝে থাকি তা মূলত IBRD এর লোন। IBRD এর জন্ম সবার আগেতখন বিশ্বব্যাঙ্ক বলতে এটাকেই বুঝা হত। বাকি চার সহযোগীর জন্ম পরে ধাপে ধাপে। একসাথে এখন তা বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রুপ। এই IBRDএর গঠন প্রকৃতি শেয়ার হোল্ডারদের মালিকানাধীন জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানীরই মতন। তবে তফাৎ হলো,এটা  কোন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক নয়।
"স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে সহায়তা দেবার জন্য ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বব্যাংক" - এই কথাটা সত্যি না। মুলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস প্রায় ইউরোপের অবকাঠামো "পুণর্গঠন ও উন্নয়নের " লক্ষ্যে। কিন্তু দ্রুত ইউরোপের বাজার সংকুচিত হয়ে এলে পুজির স্বার্থেই ১৯৬০ সালের পরে নতুন বাজার খুজতে অপেক্ষাকৃত অননুন্নত এশিয়া-আফ্রিকার দিকে নজর দেয়। কিন্তু যুদ্ধে ইউরোপের অবকাঠামো ধ্বংস হলেও ছিল তাদের দক্ষ জনশক্তি। ফলে ইউরোপে কাজ করা যত সহজ ছিল এশিয়া-আফ্রিকায় তত সহজ ছিলনা। এই সমস্যা নিরসনে বিশ্বব্যাংক তার অবকাঠামো’ ধারণায় পরিবর্তন আনে। আগে ইনফ্রাষ্টাকচার ধারণায় উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট শ্রমকে ইনফ্রাষ্টাকচারে অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হত না। পুঁজির আত্মস্ফীতি ঘটানোর জন্য দরকারী নিয়ামক শক্তি বলেও বিবেচনা করা হত না। শ্রমের ইনফ্রাষ্টাকচার মানে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়- ১. বিভিন্ন মাত্রার শিক্ষাদক্ষতার যে শ্রম দরকার তা কোথা থেকে পাবে২. প্রতিদিন যেন এসব শ্রম কারখানাকারবারের দরজায় সুস্থ সবল হাজির পাওয়া যাবেতা কীভাবে৩. বুড়া কর্মক্ষম হয়ে গেলে সমাজের বড় আপদ না হয়ে যায়৪. এ আবার যদি বাচ্চা পয়দা না করেপেলে পুষে বড় না করে তাহলে সামাজিকভাবে নতুন নিরন্তর শ্রম কোথা থেকে হাজির পাওয়া যাবে ইত্যাদি - সবকিছু যেন নিশ্চিত পাওয়া যায় এমন "শ্রমের ইনফ্রাষ্টাকচার" ও তার জন্য একটা পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ। ফলে তখন থেকেই "ইনফ্রাষ্টাকচার" উন্নয়নের ধারণা বদলে গিয়ে ফিজিক্যাল কাঠামো ইট কাঠ পাথর এর সাথে যুক্ত হয় - মানব কাঠমোর উন্নয়ন। শ্রমের ইনফ্রাষ্টাকচার ও ফিজিক্যাল ইনফ্রাষ্টাকচার উভয়ে মিলে ইনফ্রাষ্টাকচার ও তার ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়ন। তাই  বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় মানুষ ইট কাঠ পাথরের মত বস্তুআমরা এক একজন "বেনিফিসিয়ারি"  বা object বৈ আর কিছু নয়।
১৯৩০ দশকের মত মন্দা ঠেকাতে আইএমএফ এর জন্ম। আজকে বলা হচ্ছে ২০০৮ এর মন্দা ১৯৩০ সালের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাহলে আইএমএফ রাখার দরকার কীgold standard ডলারডলারের হেফাজত আমেরিকার আর ডলারের সাথে অন্য মুদ্রার বিনিময় হার সি'র থাকবে এটা ধরে নিয়ে যে আইএমএফের জন্ম হয়েছিল ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে আইএমএফের ভিত্তিমূলক সে ভাবনাগুলো বর্তমানে মৃত প্রায়অকেজো। সংগঠন হিসাবে আইএমএফের অসি-ত্ত্বন্যায্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। এক হিসাবে দেখা যায়১৯৬০ সাল থেকেই বিভিন্ন দেশকে দেয়া আমেরিকার মোট ঋণ (ডলারে হিসাব করে দেয়া) তার ঘরে মজুদ সোনার মূল্যের চেয়ে বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছেঅথচ ঐ ডলারের সোনায় বদল করার যোগ্যতা থাকার কথা। আমেরিকা ডলার বদল করে সোনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এককথায়,আইএমএফ দাঁড়িয়ে থাকার ভিত্তিমূলক ভাবনাগুলো সব ধসে পড়ে।
বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে। আগে টাকা ছাপতে ও বাজারে ছাড়ার আগে সমপরিমাণ মুল্যের সোনা ব্যাঙ্কে নগদ মজুদ রেখে তারপর ঐ টাকা বা মুদ্রা বাজারে ছাড়া হত। কাজেই নোট প্রদানকারী বা প্রতিশ্রুতিদানকারী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে এই মুদ্রা বা নোটের সমপরিমাণ সোনা তার কাছে মজুদ আছে। যে কেউ নোটের বিনিময়ে সোনা চাইলে সে তা দিতে বাধ্য থাকবে। এধরনের মুদ্রাকে বলা হয় gold standard মুদ্রা। যে মুদ্রাgold standard নয় সে মুদ্রা দাঁড়িয়ে আছে ফাঁকা রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রতিশ্রুতির উপর। অর্থনৈতিক পরিভাষায় যাকে fiat money বলে।  আজকের দিনে প্রায় সব মুদ্রাই fiat money বা স্রেফ রাষ্ট্রীয় ডিক্রি জারির ক্ষমতাগুণে সে মুদ্রা।
আমেরিকা তার রপ্তানী আয়ের ঘাটতি মিটিয়ে নিচ্ছে নিজের ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে। আমদানির বিপরীতে ট্রেজারি বিল নামক কাগজ রপ্তানী করছে। এটাকেই পণ্য হিসেবে দাঁড় করিয়ে নিজের আমদানিকে সচল রাখছে। এটা যদি না হত তাহলে আমেরিকার সাথে বাণিজ্যে অংশ গ্রহণকারী দেশের পাওনা মিটাতে আইএমএফকে এগিয়ে আসতে হত। তাদেরকে ধার দিতে হত আর রপ্তানীমুখি খাত সৃষ্টি কারর জন্য পরামর্শ দিতে হতোপ্রকল্প বানাতে হতো! ডলারের সব দোষ জানা সত্ত্বেও আরও বড় ক্ষতির ভয়ে অগত্যা সবাই মেনে নিচ্ছে। হিতে-বিপরীত হতে পারেকারণ সবাই গভীরভাবে ডলারের মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কিত হয়ে আছে। একেই বলে গ্যারাকল! এক কেচকিতে পড়া অবস্থা। ফলে এইসব সুবিধা ভোগ করে ডলার টিকে আছেঅন্য কথায় বলা যায় ক্ষতিগ্রস্থরাই আরও বড় ক্ষতির ভয়ে টিকিয়ে রাখছে।
আইএমএফের "রপ্তানিমুখী উৎপাদনের" নীতি আমাদেরকে পাটের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। পাট থেকে মুখ ফেরানোর পক্ষে আইএমএফের হাতে যে যুক্তি লেগে যায় তা হলোআমাদের পাটকলগুলো লোকসানীঅদক্ষ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ফলে এর ব্যয়দায় মিটাতে সরকারী রাজস্ব আয়ের উপর মারাত্মক চাপ পড়ছেসরকার চালানোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এগুলো বিক্রি করে দেবার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলোজুট স্পিনিং মিল যেগুলোর সবই প্রাইভেট কোম্পানী এগুলোকে সরকারী ভর্তুকি দেবার বন্দোবস্ত করা হয়। এই ভর্তুকির টাকা পাটখাত সংস্কার কর্মসূচির নামে সরকারকে ঋণ দেয়া হয়। সরকার সেই ঋণ নিয়ে প্রাইভেট কোম্পানীকে নগদ ভর্তুকি দেয়া হয়।
Foreign Investment Promotion & Protection Act বলে আইএমএফের সদস্যদেশের জন্য একটা আইনের ছাঁচ  করা আছে। ঋণ গ্রহিতা দেশের ঋণ পাবার প্রাথমিক শর্ত এটা। ফলে মান্য করা বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়তশর্ত মেনে ঋণচুক্তি আইএমএফের সাথে করে নিয়ে চলে গেলে হবে না,একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর দেশের সংসদে এ আইন পাশ করতে হবে।  বাংলাদেশ ১৯৮০ সালেForeign Investment Promotion & Protection Act১৯৮০ নামে সংসদে এই আইন পাশ করেছে। আইএমএফের টেমপ্লেটেড এই আইনের কারণে বিনিয়োগ সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট দেশকর্তৃক বায়োজাপ্ত হয়ে যাবার বিরুদ্ধে একধরণের রক্ষাকবচ।
Structural Adjustment Facility (SAF)  (১৯৮৫) ও পরে নতুন ভার্সানে Enhanced Structural Adjustment Facility (ESAF) (১৯৮৬) - এগুলোর কোনটাই আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। সারা দুনিয়াকে রপ্তানিমুখী করে আকার দিতে Structural Adjustment Facility (SAF চলেছিল ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। এরপর ১৯৯৯ সাল থেকে The Poverty Reduction and Growth Facility (PRGF) এর জায়গা নেয়যার শেষ এবছরে। আগামি বছর থেকে নতুন প্রোগ্রাম Extended Credit Facility (ECF) নামে যা হাজির হবে। এর বিশেষত্ত্ব ডোনারদের কাছে অর্থ সংগ্রহের পদ্ধতিতে,তাছাড়া এটা নতুন বোতলে পুরান মালই । এতদিন দাতাদের কাছে থেকে তিন-চার বছরের কমিটমেন্ট/অর্থ সংগ্রহ করে PRGF জাতীয় Facilities চালানো হত। এবারে নতুন পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহ করা হবে বাজার থেকেমানে আন্তর্জাতিক বাজারে যারা লগ্নিপুঁজির বিনিয়োগের ব্যবসা করে। স্বভাবতই সুদের হার হবে অনেক বেশিবাণিজ্যিক ব্যবসার লোনের মত। এই অর্থ ঋণ নিয়ে আইএমএফ আবার ০.৫% সুদে ঋণসুবিধা আকারে বিতরণ করবে - এতে যে লোকশান হবেঅর্থাৎ দুই সুদের হারের যে ফারাক এই সুদ দাতাদেশগুলো দিয়ে দেবে। এতে নিট যা ফারাকতা হলো,আগে পুরা অর্থ ছিল সরাসরি দাতা রাষ্ট্রের কোষাগারের এখন সে অর্থ আসবে টাকার বাজার থেকে,প্রাইভেট লগ্নিবিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আর কেবল এর সুদটা কেবল দাতাদেশের রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে।
পোষাকে কোটা ব্যবস্‌হা আমেরিকান জাতীয় অর্থনীতির পক্ষে একটা উৎপাদনে সুরক্ষা (protectionist) নীতি ও ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা আমেরিকার হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আইএমএফ। আইএমএফ আমাদের বেলায় বলছেআমাদের আমদানি নীতিতে কোন সুরক্ষা নীতি থাকতে পারবে নাঅবাধ আমদানির সুযোগ রাখতে হবে। আবার Multi-Fibre Agreement এর মাধ্যমে আমেরিকার protectionist পদক্ষেপ আমাদের মাথা পেতে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এই সব বাস-বতার জন্যই আমাদের দেশে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ইত্যাদি সংস্থা (বা তথাকথিত আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ) আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তথা রাষ্ট্রের সার্বভেৌমত্ব জলাঞ্জলী দিয়ে সংস্কারের নামে তাদের প্রেসক্রিপশন গিলতে বাধ্য করছে। আর বিশ্বপুজিঁ যখন যেভাবে চায় আমরা সেভাবেই তৈরী হতে বাধ্য হচ্ছি । বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ  কখনোই গনমানুষের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করেনা বরং দরিদ্র দেশের দরিদ্র মানুষদের দারিদ্রের সূযোগ নিয়ে তাদের অদৃশ্য জিঞ্জিরে বাধা আজন্ম দাসে পরিণত করার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলির উচিৎ একসাথে কিছু পদক্ষেপ নেয়াযেমন:
         Foreign Investment Promotion & Protection Act’ বাতিল/সংশোধন/প্রতিস্থাপন এর জন্য জনমত তৈরী ও সরকারকে চাপ প্রয়োগ।
         IFIs অর্থায়িত বা প্রেসক্রিপশনকৃত প্রকল্পসমূহের Social/citizen audit পূর্বক ক্ষতি (আর্থিকসামাজিকপরিবেশগত ও অন্যান্য) নিরুপণ এবং সে হিসাবে ক্ষতিপূরণ আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
         চলমান এবং প্রক্রিয়াধিন/প্রস্তাবিত সকল প্রস্তাব/প্রকল্পের শর্তাবলী জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে দেয়া এবং জনগনের মতামত গ্রহণের কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও তাদের মতামত আমলে নেয়া।
         ন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে অভিন্ন আঞ্চলিক মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে তুলে ক্রমান্বয়ে ডলার নিভর্রতা থেকে সম্পূর্ন বেড়িয়ে আসা।

No comments:

Post a Comment