Sunday, June 5, 2011

দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি নাকি উর্ধগতি’র দ্রব্য !!!


বেশ কয়েক বছর যাবৎই দেশের প্রধান বর্তমান সমস্যা হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতা যা অতি সমপ্রতি লাগামিত লাগামহীন হয়েছে। দৃশ্যত সবাই এই সমস্যা সমাধানে আপ্রাণ লড়ে যাচ্ছেন, শেষমেষ হাপিয়ে উঠে কেউ কেউ লাগাম দেয়ার চেষ্টাই ছেড়ে দিচ্ছে, কেউ কেউ লাগামের পিছে ঘুড়ে যাচ্ছে কিন' লাগামের দেখা পাচ্ছেনা। ফলাফল জনগনের নাভিশ্বাস। কিন্তু আসলেই কি বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজার লাগামহীন নাকি অতিলাগামিত?
সামপ্রতিক কয়েক বছরের দ্রব্য মূল্যের বাজার মোটা দাগে খেয়াল করলে দেখা যায় যে উৎপাদনকালে স্বল্প কিছু সময়ের জন্য ঐ পন্যের দাম সি'তিশীল থাকে, উৎপাদন যাই হোকনা কেন এর পর হুহু করে দাম বাড়তে থাকে। বর্ধিত মূল্য ভোগ করে মধ্যস্বত্তভোগীরা। অর্থনীতির মতে বাজারে পন্যের সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে কিন্তু আমার ভোতা চোখে তার কোন প্রমান পাইনা, কারণ প্রায় প্রত্যেক দ্রব্যের মূল্য যাই হোকনা কেন বাজারে সরবরাহের ঘাটতি দৃশ্যত কখনোই চোখে পড়েনা। দাম যাই হোকনা কেন টাকা হলে বাজারে সবই কিনতে পাওয়া যায়। বর্তমান সরকার সম্ভবত এই বাজার নিয়ন্ত্রনের সর্বাধিক চেষ্টা করেছে এবং সর্বোচ্চ ব্যর্থ হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রনে সিন্ডিকেট-মজুতদার-ব্যবসায়ী সবই ধরা হয়েছে, বাজারে বাজারে রাজার কাজী দাম নিয়ন্ত্রনের কাজ নিয়েছে তবু ফলাফল ঘুড়ে ফিরে একই।
আমি পেশাগত কারনে এদেশের আমজনতার আর্থিক ও অর্থনৈতিক জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখার সূযোগ পাই যারা মুলত দেশের প্রধান উৎপাদন খাত কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পেশাগত দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত উৎসাহের ফলে দ্রব্য মূল্যের গতি-প্রগতি নিয়ে বিস্তর পর্যবেক্ষনের সূযোগ হয়।
উৎপাদনের প্রায় সাথে সাথেই কৃষক বা উৎপাদনকারী তার আবশ্যিক প্রয়োজনে কিছু পন্য বিক্রয় করতে বাধ্য হয়, আবার অনেক কৃষকই তার প্রয়োজনীয় সব ফসলের চাষ প্রত্যেক বছর করেনা ফলে সে যা উৎপাদন করে তার কিছু অংশ বিক্রয় করে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ফসল ক্রয় করে। ফলে এসময় বাজারে অধিক সরবরাহের জন্য দাম তুলনামুলক কিছুটা কম থাকে। কিন্তু এর পরেই বাজারের নিয়ন্ত্রন বাজারের হাতে থাকেনা চলে যায় অদৃশ্য শক্তির হাতে। এই অদৃশ্য শক্তির বাজার নিয়ন্ত্রনের কোন যৌক্তিকতা খুজে পাওয়া যায়না তবে এটা বোঝা যায় কেউ কেউ এত লাভবান হচ্ছে, কিন্তু কারা তা খুজতে খুজতে লোম বাছতে কম্বল উজাড় হওয়ার যোগার, কিন্তু বাজার থামেনা।
আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বাজারে পাওয়া যায় মুলত দুই ভাবে-খোলা ও প্যাকেটজাত। খোলা পন্য গুলি প্যাকেটজাত পন্য হতে কিছুটা কম মূল্যে এবং তা বাজারে সরবরাহের সাথে উৎপাদকের সম্পৃক্ততা তুলনামুলক বেশী। আর প্যাকেটজাতগুলি সরাসরি উৎপাদকের কাছ থেকে ভোক্কতাদের নিকট আসেনা, তা তৃতীয় হাতে মূল্য সংযোজিত হয়ে বাজারে আসে। ফলে এর মল্য কিছুটা বেশী হওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু কতটা বেশী? বাজারে খোলা পন্যের দাম অসি'তিশীল হলেও প্যাকেটজাত পন্যের দাম তুলনামুলক সি'তিশীল। যে কোন পন্যের উৎপাদনকালে খোলা পন্য ও প্যাকেটজাত পন্যের দামের সর্বোচ্চ ব্যবধান থাকে। খোলা পন্য ও প্যাকেটজাত পন্যের দামের ব্যবধান যত কম হয় প্যাকেটজাত পন্য ততবেশী বিক্রি হয়। প্রকৃতপৰে পন্যের মূল্যবৃদ্ধিতে লাভবান বেশী হয় প্যাকেটজাত পন্য বাজারজাতকারীরা। তারা বছরের শুর্বতেই বাজার থেকে তুলনামুলক কম মূল্যে তাদের সারা বছরের প্রয়োজনীয় পন্য কিনে ফেলে, ফলে বাজারে একটা কৃত্তিম আপাত সংকট তৈরী হয় যা দাম বাড়তে সহায়তা করে। আবার সারা বছর ধরে তারা বাজারে পন্য সরবরাহের ফলে দৃশ্যত বাজারে সরবরাহের কোন ঘাটতি থাকেনা, কেবল দাম বাড়তে থাকে। নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের বাজার মুলত প্যাকেটজাত পন্য সরবরাহকারী গুটিকতক কোম্পানীর নিয়ন্ত্রনে। এদের কাছে যে পরিমান মজুদ আছে তাই মুলত বাজারে পন্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রন করে ফলে উৎপাদন বেশী হলেও দাম কমেনা।
এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি প্যাকেটজাত পন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সারা বছরের বিক্রয় ও মূল্যের তারতম্য এবং মজুদ বিশেৱষন করলে আরও সহজে তা বোঝা যাবে। আবার যদি সরকার আইন করে দেয় কোন নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান তার সাত দিনের প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পন্য মজুদ করতে পারবেনা এবং তা যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলেও বাজারের নিয়ন্ত্রণ বাজারের হাতে ফিরে আসবে।
এখানে একটা ব্যাপার লৰ্যনীয় যে বাজারে প্যাকেটজাত পন্যের আগমন ও দ্রব্য মূল্যের লাগামহীনতা প্রায় সমসাময়িক এবং সমহারে বিকাশমান। তাই দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির কারণ খুজতে গেলে প্যাকেটজাত পন্যের ভ'মিকা আগে উৎঘাটন করতে হবে।

No comments:

Post a Comment