উন্নয়ন মানে সামনে এগিয়ে যাওয়া, দুঃখ-দুর্দশা ছেড়ে বেরিয়ে আসা, জীবনমান বাড়ানো। উন্নয়ন বলতে আগেকার ধারণার মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে উন্নয়ন ধারণা আরো ব্যাপকতা পেয়েছে। অমর্ত্য সেন বলেন- জনসাধারণের সক্ষমতার নামই উন্নয়ন। তিনি মনে করেন, ‘মানুষের, সক্ষমতা নির্ভর করে, তার স্বত্ত্বাধিকারের ওপর, অর্থাৎ কি পরিমাণ দ্রব্য এবং সেবা সামগ্রীতে সে তার স্বত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে তার ওপর। মাথাপিছু কতটা খাদ্য পাওয়া যাবে অথবা মাথাপিছু মোট জাতীয় উৎপাদন কতটা এ ধরনের সাদামাটা নির্দেশকসমূহের ওপর যদি নির্ভর করি তো অনাহার, ক্ষুধা এবং বঞ্চনার সমগ্র চেহারাটা উপলব্ধির পথে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। স্বত্বাধিকার নির্ধারণ ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থায় বিভিন্ন বৃত্তিভোগী কর্মগোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের অবস্থা, এ সবের সতর্ক বিশ্লেষণ আবশ্যক।’ তার মতে, ‘উন্নয়ন আসলে মানুষের স্বাধীনতার চৌহদ্দি বাড়ানোর প্রক্রিয়া। মানুষ তার নিজের চাওয়া-পাওয়া কদ্দূর মেটাতে পারছে সে প্রশ্নটি উন্নয়নের সংজ্ঞায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
স্কুল জীবনে সরকারী উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেক ব্যাঙ্গাত্বক গল্প শুনেছিলাম। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশী শোনা বা এখন পর্যন্ত যেটা সবচেয়ে বেশী মনে আছে সেটা অনেকটা এরকম-
“জনৈক সরকারী কর্মকর্তা জনস্বার্থে পুকুর খননের জন্য সরকারী প্রকল্প তৈরী করে কোন পুকুর খনন না করেই সমুদয় টাকা আত্নসাৎ করেন। উক্ত কর্মকর্তা বদলী হয়ে গেলে পরবর্তী কর্মকর্তা কাজে যোগ দিয়ে নথি-পত্র দেখে নিশ্চিত হন পুকুর কাটার কথা থাকলেও আসলে কোন পুকুরই খনন করা হয়নি। তিনি তখন উক্ত কাল্পনিক পুকুর সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প তৈরী করেন এবং পূর্বসূরীর মতই কাজ না করে টাকা আত্নসাৎ করেন। চাকরীর ধারাবাহিকতায় আবারও নতুন কর্মকর্তা আসেন। তিনি নথি-পত্র দেখে নিশ্চিত হন ইতোপূর্বে পুকুর খনন ও সংস্কারের নামে দুইটি প্রকল্প হলেও আসলে কোন কাজই হয়নি। এবার তিনি জনস্বার্থে উক্ত কাল্পনিক পুকুর ভরাটের জন্য প্রকল্প তৈরী করেন এবং যথা রীতি পূর্ব সূরীদের পথ অবলম্বন করেন।”
এই গল্পের সত্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুললেও গল্পের আসল মাজেজা সবাই উপভোগ করত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের উন্নয়নে পরিকাঠামোতে ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে। কালক্রমে উন্নয়নের জন্য ‘অযোগ্য-দুর্নীতিবাজ সরকারী লোকজনের হাত থেকে জনগনকে উদ্ধার করতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও’র আগমন। চারিদিকে হই হ ই রই রই। রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মত গজাতে লাগল অলিতে-গলিতে হাজারও উন্নয়ন সংস্থা, নানা নামে, নানা ঢংগে। বর্তমানে বাংলাদেশে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঠিক পরিমান বোধকরি কেউই জানেনা। লাখ-লাখ এনজিও এর হাজার হাজার উন্নয়ন প্রকল্প। চারিদিকে উন্নয়নের ছড়াছড়ি, উন্নয়ন গবেষক-পেশাজীবিদের দৌড়াদোড়ি, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আর বুদ্ধিজীবি-সূশীলসমাজ এর গড়াগড়ি। আর এই উন্নয়নের ডামাডোলে সরকারী সেই গল্পের যে বেসরকারি সংস্করণ চারিদিকে ছেয়ে গেছে।’সরকারী মাল দরিয়ায় ঢাল” জাতীয় প্রবাদ-প্রবচনগুলির বেসরকারীকরণ হয়েছে। আর কেনা জানে বেসরকারী মানেই বাণিজ্য। তাই উন্নয়নের বেসরকারীকরণের ফলে উন্নয়নও এখন বাণিজ্য। শুধু বাণিজ্যই নয়, রীতিমত রমরমা বাণিজ্য।
নিকট অতীতেও বাংলাদেশের সামাজিক জীবন বিশেষ করে বড় বড় কিছু শহর ছাড়া সর্বত্রই ‘গ্রাম্য’ ছিল যা হঠাৎ জোয়ারে ভেসে গিয়ে এখন ‘স্মার্ট’ হবার অদৃশ্য প্রতিযোগিতা সর্বত্রই বিদ্যমান। উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, মানবাধিকার, অধিকার, ক্ষমতায়ন, দিন বদল ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর কথার ফুলঝুড়ি সর্বত্রই। কিন্তু সাধারন মানুষের জীবন প্রতিনিয়ত কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে, কোন রকমে খেয়ে পড়ে ধড়ে প্রাণ রাখার সংগ্রামই এই জনপদের মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন সংস্থাগুলির বার্ষিক প্রতিবেদন, কেস স্টাডি বা ছবি দেখলে মনে হবে বিগত দুই দশকে উন্নয়নের জোয়ার ব্ইয়ে গেছে। ডিসপ্লে বোর্ডের ছবিতে মানুষের অধিকার রক্ষায় তারা বট বৃক্ষের ভূমিকা পালন করেছে। অবশ্য উন্নয়ন যে কিছুই হয়নি তা নয়। দেশে ব্যাঙ এর ছাতার মত এনজিও গড়ে উঠেছে যার নিয়ন্ত্রণ তো দুরের কথা সরকার বা কেউই সংখ্যাটাও জানেনা। দেশে হাজারও উন্নয়নবিদ এবং বাই প্রোডাক্ট হিসাবে বুদ্ধিজীবি বা সুশীল সমাজ নামের এক শ্রেনীর পরজীবী সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাধীনতা-উত্তর কালে প্রথমে আমদানী হয়েছিল বুদ্ধিজীবী নামক এক শ্রেণীর সেবাদাস যারা সমাজে পরজীবী’র মতো সমাজ-জীবনের অন্তরস্থলে ক্ষতের সৃষ্টি করে গিয়েছে অনবরত। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সাথে বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথাকথিত উন্নয়ন কর্মীদেরকে এক শ্রেণীভুক্ত করে নতুন পদবাচ্যে বিভুষিত করেছে সুশীল সমাজ নামে। অথচ যে পশ্চিমা প্রভূরা এই সুশীল সমাজের ধারণা আমদানী করেছে তাদের নিজেদের দেশে এই আজব চিড়িয়াদের কোন অস্তিত্ব নাই।
তারা আমাদের জন্য সুশীল সমাজের ধারণা নিয়ে এসেছে কারণ, এধারণার মাধ্যমে অতি সহজেই তারা এক ঢিলে দুই পাখী মারা যায়। সুশীল সমাজের নামে একদল ভুঁইফোড় সর্ববিদ্যাবিশারদ তৈরী ও স্বকৃতি’র মধ্যে দিয়ে একদিকে আমাদের সাধারণ মানুষদের মনে এক ধরনের হীনমণ্যতাবোধ জন্ম দিবে, অপর দিকে দালাল, গায়ে মানে না আপনি মোড়ল - এই চাটুকার শ্রেণীর মাধ্যমেই তারা তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করবে। এই পা-চাটা উচ্ছিষ্টভোগী শ্রেণীকে দিয়ে অতি সহজেই তারা তাদের অভীষ্ট কাজগুলো উদ্ধার করে নিতে পারবে। আমাদের জ্ঞানপাপী সেই সব বুদ্ধিজীবীরা কিংবা তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিভুরা তাদের প্রভুরা যা-ই বলে দিনরাত তারই কোরাস গেয়ে বেড়ায়। আর তাদেরকে সেই গলাবাজী আর ক্রিয়াকর্মের স্বীকৃতি দিয়ে চলে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর ভূইফোড় গণমাধ্যম। চটকদার শব্দবন্ধের মধ্যে দিয়েই তারা আমাদেরকে বোকা বানিয়ে উন্নয়নের নামে একদিকে শাসন ও শোষণ অন্য দিকে প্রভূদের তোষন করে যাচ্ছে।
উন্নয়ন এর জোয়ারে(?!) সবকিছু দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী সমস্যাগুলির সাথে যোগ দিচ্ছে নিত্য নতুন কৃত্রিম সমস্যা। উন্নয়নের নানা তত্ত্বে দেশ ভাসছে, চারিদিকে হই হই রই রই। অথচ প্রতিদিনই কমছে মানুষের স্বস্তি বোধ। সামাজিক সমস্যার রাষট্রীয়করন এই প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান করছে। ‘মাইন্ডসেট’ পরিবর্তনের হাজার এন্তেজাম তথাকথিত উন্নয়নের লক্ষ্যে। কিন্তু যাদের উন্নয়নের জন্য এই যজ্ঞ তাদের অকথিত কথা কেউ শোনে না। উন্নয়ন সূচকের উর্ধগতি সত্ত্বেও দিনে দিনে গরীবরা আরো গরীব হচ্ছে, সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রথাগত কয়েকটি সূচক হচ্ছে জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কল্যাণ। কোন দেশের জাতীয় আয় বাড়তে থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। যে কারণে মাথাপিছু আয়কে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হিসাবে গ্রহণ করা হয়। সেমতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অপেক্ষা জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার অধিক হলেই তাকে উন্নয়ন বলা যায়। জাতীয় আয়কে দেশের জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে প্রকৃত মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি মানব উন্নয়ন সূচক। মানব উন্নয়ন সূচকে মানুষের শিক্ষা, আয়ুষ্কাল, ক্রয় ক্ষমতা প্রভৃতি বিবেচনা করা হয়। তবে এই সূচকে জাতীয় ভাবে তথ্য নেওয়া হয়। কিন্তু ধনী-গরীব বৈষম্য, আঞ্চলিক বা গ্রাম শহরের বৈষম্য আমলে নেওয়া হয় না। ফলে এই সূচকে গণমানুষের প্রকৃত উন্নয়ন বোঝা যায় না।
উন্নয়নের মাঠে বোধ করি সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় মাইক্রোক্রেডিট। কারণ এটা দারিদ্রটিকা। সবাই এই টিকা নিলে দারিদ্র আর কোথাো থাকার জায়গা না পেয়ে জাদুঘড়ে আশ্রয় নেবে!! তাই মাইক্রোক্রেডিটের জোয়ার, বন্যা, অত:পর সুনামি (!?)
মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। তবে এতদিন সমালোচনার বেশীরভাগই এর স্বীকৃত প্রবক্তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সমালোচনা বেশীরভাগই তত্ত্ব নির্ভর । অনেক বিশেষজ্ঞই অনেক ভাবে অনেক মাত্রায় এর সমালোচনা করেছেন। দৃশ্যত: এর সবচেয়ে বড় দোষ উচ্চ সূদের হার। কিন্তু মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে কোন সমালোচনাতেই বলা হয়না এটা নিষিদ্ধ করা হোক। আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমালোচনার নামে যা হয়েছে তা হচ্ছে গীবত, শুধু দোষ নিয়ে আলোচনা করা হয়; কারণ সমালোচনা হলে এই খাতের দূর্বলতা কাটিয়ে দিনে দিনে তার উন্নতি হত। কিন্তু প্রায় চার দশক ধরে এর আগমন হলো এর কাঠামোগত বা ব্যবহারিক উৱকর্ষ সাধিত হয়নি বরঙ সনাতন টাকা তৈরীর সস্তা পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুজির হিসাবে এই খাত এখন মহীরুহ এবং সবচেয়ে বেশী অনিয়ন্ত্রিত খাত। হাজার কোটি মানুষ ও টাকা সংশ্লিষ্ট এই খাতে । আমার তো মনে হয় বাঙলাদেশে এই মহূীর্তে ঠিক কতগুলি মাইক্রোক্রেডিট দাতা প্রতিষ্ঠান আছে এর হিসাব সয়ঙ বিধাতা ছাড়া কেউ জানেনা। এই সেক্টরে যদি কোন কারনে ব্যবস্থা ভেংগে পড়ে তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে যে সুনামী বয়ে যাবে তা নিয়ন্ত্রণ বা মোকাবেলার সামর্থ সরকারের নাই।
বর্তমানে বাংলাদেশে আসলে প্রকৃত পক্ষে কত সংখ্যক এনজিও/সংগঠন মাইক্রোক্রেডিট/মাইক্রোফাইনান্স সেবা দেয় তার হিসাব বোধ করি স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ জানেনা। সুতরাং সেবা গ্রহীতাদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে চাওয়াই অপরাধ! তারপর আবার আছে Overlapping। তবে এই খাতে কত টাকা বিনিয়োগ করা আছে, বিনিয়োগকৃত টাকার কত অংশ উদ্যোক্তাদের (এনজিও/প্রতিষ্ঠান মালিকদের ?!) আর কত অংশ ঐ “Poorest of the poor” দের সঞ্চিত তাও অস্পষ্ট। এই বিষয়ে সহীহ্ তথ্যের তালাস করা কয়লার খনিতে কালো বেড়াল খোজার মতোই!
কিন্তু এই “Poorest of the poor” দের ভিতর যে নিরব হাহাকার চলছে তা বেশীরভাগ মানুষই শুনতে পায়না কিংবা সচেতন ভাবে শুনে না, বিশেষ করে যাদের শোনা দরকার। কারণ এদের আবার অনেকেরই রুটি-রুজি নির্ভর করে এই “Poorest of the poor” দের নিয়ে “Poverty trade” করে। অথচ “কিস্তি” এর আতঙ্কে অনেকের পারিবারিক কাঠমো ভেংগে পড়ার উপক্রম, বেড়ে যাচ্ছে পারিবারিক অস্থিরতা। আর পরিবারের অস্থিরতা সমাজে সংক্রামিত হয় গাণিতিক হারে কিন্তু সমাজের অস্থিরতা রাষ্ট্রে সংক্রামিত হয় জ্যামিতিক হারে।
সম্প্রতি আমেরিকার হাউজিং বুদবুদ এবং এর ধারাবাহিকতায় বিশ্ব জুড়ে তুলকালাম কান্ড হয়ে গেল যার রেশ এখনো কাটেনি। আমেরিকার মধ্যবিত্ত সমাজকে ঋণের জাল থেকে বেড় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের “Bail Out” প্রকল্প চলছে। ফাইনান্স ক্যাপিটালের যুগে ডলারের কল্যাণে আমেরিকার কাছে “Money absolutely doesn’t matter”. কিন্তু আমাদের দেশের হতভাগা এই লক্ষ জনগোষ্ঠীর “Bail Out program” নিয়ে কে এগিয়ে আসবে!?
মাইক্রোক্রেডিট খাতের কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও এর পদ্ধতিগত ত্রুটি’র কারণে এই আত্নঘাতি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন ক্রেডিট অবশ্যই একটি দরকারী ও উপকারী উপাদান যদি তা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, না হলে তা হবে আত্নবিনাসী। বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট খাতে কাগজে কলমে যে পরিমান নিয়োগ আছে বাস্তবে তার বিপরীতে নগদ অর্থ বা সম্পদ বেশী তো তো দুরের কথা তার চেয়ে অনেক কম সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশই অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যায় হয়ে এই খাতকে অন্ত:স্বার শূন্য করে ফেলেছে। তাই ব্যবস্থা ভেংগে পড়তে বাধ্য, দু’দিন আগে বা পরে, কেবল সময়ের ব্যাপার!
সবাই সবকিছু পারেনা, পারার দরকারও নাই। কিন্তু প্রত্যেকেই কিছু না কিছু পারে। তবে কোন মানুষই জন্মের আগে থেকে কোন কিছু শিখে আসেনা বরঞ্চ জন্মে শিখে। মানুষ জীবনের প্রয়োজনে যা কিছু শেখে তার বেশীরভাগই সচেতন কোন প্রচেষ্টা ছাড়াই প্রাকৃতিক ভাবে শেখে। আনুষ্ঠানিকভাবে যা কিছু শেখে তার অধিকাংশই বাস্তব জীবনে কোন ব্যবহারিক প্রয়োজনে আসেনা। তেমনি যা কিছু শেখার দরকার তার সব কিছুই কখনো শেখাও হয়না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে শিক্ষা দেয় তা পরীক্ষার হলের বাইরে খুব একটা কাজে আসেনা। চাকরী না পেলে পুরো শিক্ষা জীবনই বৃথা। অথচ চাকুরী জীবনেও ঐ শিক্ষার খুব একটা ব্যবহার নেই। যে পরিমান সময়, শ্রম ও সম্পদের বিনিয়ে যে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করি তা পর্বতের মুশিক প্রসবের ন্যায়। এই ব্যবস্থায় আমাদের প্রয়োজন, স্বামর্থ ও সম্ভাবনা অনুযায়ী শিক্ষা না দিয়ে বরঞ্চ শিক্ষা ব্যবস্থানুযায়ী বা অন্যের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আমাদের স্বামর্থ গড়ে তোলার অমানবিক প্রচেষ্টা সর্বত্রই বিদ্যমান। তাহলে তো এই ব্যবস্থা না থাকলেই ভালো হয়! কারণ এই ব্যবস্থা কেবল মাত্র উৎপাদন প্রক্রিয়া টিকিয়ে রাখার স্বার্থে নানা ছলে বলে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া। বর্তমান জাতীয় উন্নয়ন নীতি-কাঠামোতে মানব সম্পদ উন্নয়ন মানে পুজি’র নিরন্তর মুনাফা সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সস্তা শ্রমের সহায়ক অবকাঠামো নিশ্চিতকরণ যা আসলে আজন্ম দাসত্বের অদৃশ্য শৃঙ্খল।
নতুন আলোর সন্ধানে
To be continued
No comments:
Post a Comment