একজন মানুষ জীবনে যা অর্জন করে আর ভোগ করে এই দুইয়ের ব্যবধান তার জীবনে প্রকৃত সঞ্চয়। এই সঞ্চয়ই প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করছে। বিশ্বকে মোটা দাগে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভাগ করলে বলা যায় আমেরিকা, এশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া এই তিনের প্রভাব সবচেয়ে বেশী। আমেরিকার অর্থনীতি অহেতুক সমৃদ্ধ বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস'ার কারনে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস'া ব্যাংক নির্ভর একথা বলা নিষপ্রয়োজন, আর কোন দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা প্রত্যক্ষ ভাবে ব্যক্তি জীবনে অপরিসীম। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যাবস'াপনার ত্রুটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাংকে প্রচুর অর্থ জমা রাখার ফলে আমেরিকার সব ব্যাংকেই বিশেষ করে বড় বড় ব্যাংক গুলিতে ঋণ দেবার মত অঢেল অর্থ থাকে। ব্যাংক গুলি বিভিন্ন নামে ও কৌশলে জনগনের মধ্য সহজ শর্তে ও অতি সহজে বিপূল পরিমান ঋণ বিতরন করে, ফলে জনগনের হাতে প্রচুর অর্থ আসে। উদাহরন সরুপ কারও যদি বাড়ী কেনার জন্য দুই লাখ ডলার প্রয়োজন হয় সে ঋণ পেতে পারে হয়তো সাড়ে তিন বা চার লাখ ডলার। এর ফলে জনগনের গড় ভোগ বেড়ে যায় সকল ক্ষেত্রেই। আর হাতে অর্থের সমাগম থাকায় কর্মের ও সৃষ্টি হয় ব্যাপক। এভাবেই আমেরিকার জনগন অন্যের অর্থে (বিশ্বেও বিভিন্ন দেশের জনগনের) ভোগ বিলাস করে আসছিল, মুলত মুদ্রা ব্যাবস'ার কারণেই নিরবে এই ঘটনা ঘটে আসছিল। ব্যাংক গুলির হাতে প্রচুর অর্থ থাকায় তারা প্রাইম ও সাব প্রাইম মার্কেটের মাধ্যমে ঋণ বিতরনের মচ্ছব চালায়। স্বাভাবিক ভাবেই জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রচুর আমদানীও করতে হয়। আবার এই আমদানী যেসব দেশ থেকে করা হয় ঐসব দেশের অর্থই আমেরিকার ব্যাংকগুলির মাধ্যমে জনগনের হাত হয়ে আমদা্নীতে ব্যবহৃত হয়। মানে যাদের অর্থ তাদের কাছ থেকেই কেনা আবার তাদের অর্থেই, অর্থাৎ অর্থেও মালিক ও উৎপাদক একজন আর ভোক্তা আরেকজন(!)। বিশাল এক মিথ্যের ওপর ফুলে থাকা আমেরিকার অর্থনীতি তাতো চুপসে যাবেই। ইউরোপ তার ইউরোর কারনে আমেরিকার এ ধা্ক্কা থেকে অনেকটা বেচেছে তবে তাদের ব্যাংক গুলোতেও প্রচুর অর্থ জমা থাকায় তারাও একই কায়দায় ঋণ বিতরন করেছে। খুব সহজে ঋণ পাওয়া যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে কারোরই ঋণ খেলাপি হওয়ার কথা নয় কারণ প্রত্যেকেরই ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পায়, পুরাতন ঋণ পরিশোধ করে অধিক পরিমানে নতুন নতুন ঋণ গ্রহন, কই এর তেলে কই ভাজা আর কি! ব্যাংক গুলোও বছর শেষে বিপুল মুনাফা করে, ব্যাংক কর্মীরা উচ্চ হারে বেতন পেতে থাকে, চারি দিকে বাহ্ বাহ্। আমেরিকার দেশজ উৎপাদন ছাড়াও সরকারের হাতে প্রচুর কালো টাকা আছে, অস্ত্র বিক্রি, চাঁদাবাজি, রাষ্ট্রীয় চুরি ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত। এই অর্থকে আভ্যন-রিন অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হলে তা ভূর্তুকি আকারে করতে হবে। আর বর্তমান অবস'ায় ব্যাংক গুলোকে বাচানোর নামে এই কাজটি করা খুবই সহজ। এজন্য ব্যাংকগুলো যে কারনে বির্যয়ে পড়ল তা দুর করে ব্যাংকের ঋণ আদায়ের মাধ্যমে আর্থিক ব্যাবস'া পূনঃস'াপনের দিকে তাদের নজর নেই। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের ব্যাংকিং ব্যাবস'ায় কঠোর নিয়মারোপ ও শ্রেনীকরনের মাধ্যমে ঋণ প্রবাহ বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে শ্লথ রাখে ফলে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলিতেও পর্যাপ্ত অলস অর্থ মজুদ থাকে ঋণ নেবার উপযুক্ত লোক না পাওয়ার ফলে। আর অতিরিক্ত অর্থ তখন ডলার রিজার্ভ ও অন্যান্য প্রকারে চলে যায় আমেরিকান ব্যাংকিং চ্যানেলে।
বর্তমান এই নিয়মবদ্ধ আর্থিক অনাচারের ফলে পৃথিবীর উৎপাদন ভোগ করে যারা ন্যায্যত তারা তার প্রাপক নয়, কেবল মাত্র বৈশ্বিক লেন দেন ব্যাবস'ায় ডলার ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবেই আমেরিকায় অর্থনৈতিক ফানুস গড়ে উঠেছে। এই সমস্যার ন্যায় সঙগত সমাধান আমেরিকার ব্যাংকে জমাকৃত বিভিন্ন দেশের সব অর্থের দায়িত্ব সরকারের কাধে নেয়া এবং বাজেটে এই অর্থের সংস'ান করা। অথবা আমেরিকা থেকে তাদের জমাকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা, যদিও তা এই মহুর্তে সম্ভব নয়। তাই ইউরোর মত আরো বিভিন্ন আঞ্চলিক মুদ্রার প্রচলন করা দরকার তাতে অন-ত কিছুটা ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে। যদিও তাতে আমেরিকার অর্থনীতিতে এক কেয়ামত হয়ে যাবে আর তা হওয়াও উচিৎও। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি আমেরিকার ব্যাংকগুলিতে অন্যান্য দেশের ন্যায় একই নিয়মে শ্রেনীকরন করা হয় তাহলে সম্ভবত সর্বোচ্চ শ্রেনীকৃত ঋণের দেশে হবে আমেরিকা। আমেরিকান ব্যাংক গুলির উচিৎ জনগনের ঋণ মাফ বা অবলেপন করে দেয়া এবং এখাতে ব্যাংকগুলিকে পরিকল্পিতভাবে ভূর্তুকি দেয়া যাতে ব্যাংগুলো জনগনের আমানতের সুরক্ষা করে আর্থিক শৃংখলায় ফিরে আসতে পারে।
অনেকেই বলছেন আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল নিয়ন্ত্রনের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে, আসলে এই শিথিল নিয়ন্ত্রন আমেরিকার অজ্ঞাতে নয় বরং জ্ঞাতসারে এবং পরিকল্পিত ভাবে। অবশ্য এই পরিকল্পনার বাস-বায়নের জন্য খুব বেশী প্রচেষ্টার দরকার হয়নি, বৈশ্যিক মুদ্রা ব্যবস'ার ফলে বরং তাদের ঘড়ের দুয়ারে এসে সূযোগ ধরা দিয়েছে। সেই সূযোগে তারা হয়ে গেছে আমানতের খেয়ানতকারী। আমেরিকা তার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের অর্থের নিরাপত্তার বদলে নিজ দেশের জনগনের ভোগ বিলাসের ব্যাস'া করেছে, তাই রাষ্ট্র হিসাবে আমেরিকা তার জনগনের কাছে বাহবার দাবীদার তো বটেই।
আমেরিকা তাদের স্বসৃষ্ট এই সমস্যা অত্যন- কৌশলী প্রপাগান্ডার মাধ্যমে আন-র্জাতিক সমস্যা হিসাবে বিশ্ববাসীর ঘাড়ে চালান করে দেয় ’অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার’ কর্মসূচীর মাধ্যমে। এই কর্মসূচিতে যে মহাবিশাল অর্থ সরবরাহ করে তার উৎস কি? এটা কি আমেরিকার জনগনের করের পয়সা নাকি তাদের আভ্যন-রিন উৎপাদন হতে অর্জিত? বিভিন্ন অজুহাতে ও সূযোগে অন্যান্য দেশ থেকে চুরি করা অর্থ? নাকি কেবল কাগজ হতেই উৎপাদিত (ছাপানো)?
No comments:
Post a Comment