সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের উন্নয়নে পরিকাঠামোগত ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে। ’সরকারী মাল দরিয়ায় ঢাল” জাতীয় প্রবাদ-প্রবচনগুলির বেসরকারীকরণ হয়েছে। আর কেনা জানে বেসরকারী মানেই বাণিজ্য। তাই উন্নয়নের বেসরকারীকরণের ফলে উন্নয়নও এখন বাণিজ্য। শুধু বাণিজ্যই নয়, রীতিমত রমরমা বাণিজ্য।
স্কুল জীবনে সরকারী উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেক ব্যাঙ্গাত্বক গল্প শুনেছিলাম। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশী শোনা বা এখন পর্যন্ত যেটি সবচেয়ে বেশী মনে আছে সেটা অনেকটা এরকম-
“জনৈক সরকারী কর্মকর্তা জনস্বার্থে পুকুর খননের জন্য সরকারী প্রকল্প তৈরী করে কোন পুকুর খনন না করেই সমুদয় টাকা আত্নসাৎ করেন। উক্ত কর্মকর্তা বদলী হয়ে গেলে পরবর্তী কর্মকর্তা কাজে যোগ দিয়ে নথি-পত্র দেখে নিশ্চিত হন পুকুর কাটার কথা থাকলেও আসলে কোন পুকুরই খনন করা হয়নি। তিনি তখন উক্ত কাল্পনিক পুকুর সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প তৈরী করেন এবং পূর্বসূরীর মতই কাজ না করে টাকা আত্নসাৎ করেন। চাকরীর ধারাবাহিকতায় আবারও নতুন কর্মকর্তা আসেন। তিনি নথি-পত্র দেখে নিশ্চিত হন ইতোপূর্বে পুকুর খনন ও সংস্কারের নামে দুইটি প্রকল্প হলেও আসলে কোন কাজই হয়নি। এবার তিনি জনস্বার্থে উক্ত কালপনিক পুকুর ভরাটের জন্য প্রকল্প তৈরী করেন এবং যথারীতি পূর্বসূরীদের পথ অবলম্বন করেন।”
এই গল্পের সত্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুললেও গল্পের আসল মাজেজা সবাই উপভোগ করত। কালক্রমে উন্নয়নের জন্য ‘অযোগ্য-দুর্নীতিবাজ’ সরকারী লোকজনের হাত থেকে জনগনকে উদ্ধার করতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস'া বা এনজিও এর আগমন। চারিদিকে হই হ ই রই রই। রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মত গজাতে লাগল অলিতে-গলিতে হাজারও উন্নয়ন সংস্থা, নানা নামে, নানা ঢংগে। বর্তমানে বাংলাদেশে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঠিক পরিমান বোধকরি কেউই জানেনা। লাখ-লাখ এনজিও এর হাজার হাজার উন্নয়ন প্রকল্প। চারিদিকে উন্নয়নের ছড়াছড়ি, উন্নয়ন গবেষক-পেশাজীবিদের মহামারি, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আর বুদ্ধিজীবি-সূশীলসমাজ এর জগাখিচুরী। আর এই উন্নয়নের ডামাডোলে সরকারী সেই গল্পের যে বেসরকারি সংস্করণ চারিদিকে ছেয়ে গেছে।
No comments:
Post a Comment